
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দী ইউনিয়নের আবুরা এলাকায় মানব পাচার প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক এক জারীগান পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুইজারল্যান্ড অ্যাম্বাসির অর্থায়নে এবং উইনরক ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় ও এসডিএস এর বাস্তবায়নে, আশ্বাস প্রকল্প’র আওতায় এই আয়োজন করা হয়। মানব পাচারের শিকার হয়ে ফিরে আসা নারী ও পুরুষদের জন্য এই জারীগান আসরটি আয়োজন করা হয়।
আজিজ বয়াতির দল গানের তালে ও সুরে মানব পাচারের বিভিন্ন ক্ষতির দিক তুলে ধরেন। জারীগানে বাস্তব ঘটনা নির্ভর কয়েকটি কাহিনি উপস্থাপন করা হয়, যেখানে সুরের তালে জানানো হয়, কিভাবে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভনে পড়া মানুষরা অবশেষে নিপীড়নের শিকার হন। একই সঙ্গে তুলে ধরা হয়, সচেতন থাকলে কীভাবে এই প্রতারণা এড়ানো সম্ভব।
বুধবার বিকালে উপজেলার চিকন্দী ইউনিয়নের আবুরা এলাকায় আনুমানিক ২০০ জন স্থানীয় জনগণের উপস্থিতিতে এই জারীগান পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ‘আশ্বাস প্রকল্প’র (এপিপি) প্রোগ্রাম অফিসার কামরুল হাসান এবং কমিউনিটি মবিলাইজার তানভিরুল হাসান সিজার।
জারীগান শুনতে আসা চিকন্দি ইউনিয়নের আবুরা এলাকার জবড় আলি মাদবরের ছেলে রফিক মাদবর (৪৫) বলেন, “আজকে জারীগানের আসর থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। অবৈধ উপায়ে বিদেশে গেলে মানুষ কিভাবে নিঃস্ব হয়, সেগুলো আজিজ বয়াতির গানে গানে শুনলাম। প্রোগ্রামে এসডিএস-এর একজন বললেন, কিছুদিন আগে নাকি মাদারীপুরের কয়েকজন লিবিয়া দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয়েছেন। পরিবারের লোক তাদের নাকি খুঁজে পাচ্ছে না। যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে আমিও আমার পরিবারের কাউকে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠাবো না।”
আরেকজন দর্শক, একই এলাকার আইয়ুব আলী তালুকদারের ছেলে আব্দুল লতিফ তালুকদার (৭০) বলেন, “আজিজ বয়াতি তার গানের মাধ্যমে আজকে একটি ছেলের গল্প বললেন। যে ছেলেটি জমি বিক্রি করে ধার দেনা করে বিদেশে গিয়েছিল। পরে অবৈধভাবে কাজ করার কারণে পুলিশে ধরা খেয়ে দেশে ফিরে এসেছে। সেই ছেলেটির পরিবার তাকে পাঠাতে গিয়ে ঋণের জর্জরিত হয়েছে। তাই চিন্তা করেছি, যদি পরিবারের কাউকে বিদেশে পাঠাই, তাহলে বৈধভাবে পাঠাবো।
জারীগানের আসর শেষে ‘আশ্বাস প্রকল্প’র (এপিপি) প্রোগ্রাম অফিসার কামরুল হাসান (এপিপি) উপস্থিত এলাকাবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “কোনভাবেই পরিবারকে বিপদে ফেলে বা নিজের জীবনকে বিপদে ফেলে অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়া যাবে না। যারা অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা খেয়ে শূন্য হাতে দেশে ফেরত আসেন, তাদের কেউ খবর নেয় না। খবর নেয় যাদের বাড়ি-গাড়ি হয়েছে। কিন্তু আমরা সেই বিপথগামী ও ভুক্তভোগী বিদেশ ফেরত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদেরকে মানসিক সাপোর্ট দিচ্ছি। তারা যেন নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। তাদেরকে উদ্যোক্তা হওয়ার সহযোগিতা করছি। আমরা সব সময় এই ধরনের ভুক্তভোগীদের পাশে রয়েছি।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।