
শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মনিরা বেগমের সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রসূতি মা সহ নারীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। পরিবার কল্যান কেন্দ্রে অবস্থান করার কথা থাকলেও তিনি আসনেত কালেভদ্রে। ফলে সরকারি ঔষধ রোগীদেরকে দিতে না পেরে বস্তায় বস্তায় ঔষধ মেয়াদোত্তীর্ন করে ফেলে দিতেন সেফটি ট্যাংকি, আশপাশের ডোবা, পুকুর ও খালে। তার অনুপস্থিতির কারণে মাঝে মধ্যে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বাইরেও পাশের বাড়িতে প্রসূতি মায়েরা সন্তান প্রসব করতেন। যা আধুনিক যুগের স্বাস্থ্যসেবাকে নিয়ে গেছে পৌরানিক যুগে। স্থানীয় লোকজনের কাছে বিষয়টি খোলসা হয়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করতে শুরু করেছে।
স্থানীয় জনসাধারণ, ভূক্তভোগী রোগী ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, শহরের আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলের গর্ভবতী ও প্রসূতি মা সহ নারীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র স্থাপন করে। পরিবার কল্যান পরিদর্শিকাদের সার্বক্ষণিক আবাসন ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত সরকারি ঔষধ সরবরাহ করে আসছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দেয়া দায়িত্ব ও নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মনিরা বেগম বছরের পর বছর স্বৈরশাসকের ক্ষমতাবলে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। শুধু সরকারি ঔষধেরই অপচয় করেননি গর্ভবতী মা, প্রসূতি মা ও নারীরাও বঞ্চিত হয়েছেন তাদের স্বাস্থ্য অধিকার থেকে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মনিরা বেগম জেলা শহরে তার নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। সকাল ১০টার দিকে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এসে বসতেন। ১/২ ঘন্টা থেকে আবার নিজ বাড়িতে চলে যেতেন। এই সময়ের মধ্যে কোন রোগী গেলে তাদেরকে দূর থেকে বলে দিতেন ঔষধ নাই। ডেলিভারি রোগীরা এসে দেখতেন পরিবার কল্যাণ কেদ্রে তালাবদ্ধ। গত ৩ বছরে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পাশের বাড়িতে ২টি শিশুর নরমাল ডেলিভারী হয়।
রুদ্রকর পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আয়া জিনাত রেহানা জানায়, তার স্যার পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মনিরা বেগম। তার নির্দেশে তিনি জমে থাকা মেয়াদোত্তীর্ন ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী পুড়ে ধ্বংস করে এবং বস্তায় ভরে পানিতে ফালায়।
রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান ঢালী জানায়, তার নিজ এলাকায় পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি অবস্থিত। শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুর রব মুন্সীর শ্যালিকা মনিরা বেগম সেই পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা। সেই দম্ভের সাথে নিজেকে উপস্থাপন করতেন শুধু তাই নয়, দায়িত্বেই অবহেলা ও এলাকার মানুষের সাথে দুর্ব্যবহারও করতেন। তাছাড়া প্রতিদিন দুপুর ১২টার পূর্বেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতেন বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য। ১১ বছরে সে একদিনও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে তার নির্ধারিত আবাসনে অবস্থান করেনি।
অভিযুক্ত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মনিরা বেগম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী। তার গ্রহণ করা কোন ঔষধ মেয়াদোত্তীর্ন হয়নি বা বস্তা বন্দি করে কোথায় ফেলেননি। কল্যাণ কেন্দ্রের ভিতরের ডোবা পুকুরে, সেফটি ট্যাঙ্কিতে কিভাবে ঔষধ এসেছে সেই সম্পর্কে তিনি কিছুই জানে না। তবে তিনি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে অবস্থান করতেন না বলে স্বীকার করেছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও নড়িয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ঔষধ মেয়াদোত্তীর্ন হওয়ার তিন মাস পূর্বে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর কথা থাকলেও তার কোন প্রমাণ মেলেনি। মেয়াদোত্তীর্ন ঔষধ ধ্বংসের টিম রয়েছে। প্রয়োজনে তারা ঔষধ বিনষ্ট করবে। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা যে ঔষধ বিনষ্ট করেছে তা অবৈধ প্রক্রিয়া।
শরীয়তপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ডা. সানোয়ার হোসেন বলেন, ঔষধের মেয়াদোত্তীর্ন হওয়ার ৩ মাস পূর্বে লিখিত ভাবে উপজেলা অফিসকে অবগত করবেন। অফিস কর্তৃপক্ষ সেই ঔষধ তুলে নিয়ে চাহিদা সম্পন্ন কল্যাণ কেন্দ্রে প্রেরণ করবে। এছাড়াও যদি ঔষধ বিনষ্ট করার প্রয়োজন হয় তাহলে নির্ধারিত টিম আছে তারা কাজ করবে। তদন্তকালে এই পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সরকারি ঔষধ দেখা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে পোড়া ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রীও পাওয়া গেছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।