
দীর্ঘদিন বাহরাইন প্রবাসে রয়েছে শুকুর আলী ছৈয়াল নামে এক ব্যক্তি। তিনি বিভিন্ন সময় তার এতিম ভাতিজাকে বাহরাইন প্রবাসে নেওয়া ও তাদের নামে বাহারাইনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাতের চেষ্টা করে আসছেন। এবার তিনি তার মৃত ২ ভাইয়ের ৫ এতিম সন্তানদের জমি আত্মসাতের জন্য কথিত দলিল সৃষ্টি করে জমি দখল করেছেন। এমন ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পাচক গ্রামে। বিষয়টি পারিবারিক ভাবে সমাধান না হওয়ায় প্রতারক চাচা শুকুর আলী ছৈয়াল, জব্বর আলী ছৈয়াল ও ফুফু পান্না বেগমদের বিরুদ্ধে এতিম ভাতিজা ছোলাইমান ছৈয়াল মামলা করেছেন। মামলা নং ১২৬/২০২৫।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পাচক গ্রামের টোকানি ছৈয়াল প্রায় ১ যুগ পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। তার রেখে যাওয়া ৪ ছেলে রঞ্জু ছৈয়াল, জব্বর ছৈয়াল, সোনাই ছৈয়াল ও শুকুর আলী ছৈয়াল এবং ২ মেয়ে পারভীন আক্তার ও পান্না বেগম। টোকানি ছৈয়ালের মৃত্যুর পূর্বেই বড় ছেলে রঞ্জু ছৈয়াল ও সোনাই ছৈয়াল মারা যায়। রঞ্জু ছৈয়াল মেয়ে নুরজাহান, টুম্পা ও ছেলে হানিফ এবং সোনাই ছৈয়াল মেয়ে সোনিয়া ও ছেলে ছোলাইমানকে রেখে যায়। রঞ্জু ও সোনাইর স্ত্রীরা ঢাকায় গিয়ে সাধ্যানুযায়ী পরিশ্রম করে সন্তানদের বড় করে। সন্তানদের বিয়েও দিয়েছেন। সন্তানরা তাদের পিতার ভিটায় ঘর তৈরী করে বসবাস করতে চাইলে বের হয়ে যায় থলের বিড়াল। প্রবাসী প্রতারক চাচা শুকুর আলী ছৈয়াল এতিমদের জমি আত্মসাতের জন্য ১৩ বছরের পুরনো একটি দলিল বের করেন। সেখানে দেখা যায় টোকানি ছৈয়াল তার মৃত্যুর ১ বছর পূর্বে তার মোট ২৪ শতাংশ জমির মধ্যে বাড়ির সামনের অংশের ১২ শতাংশ জমি শুকুর আলী ছৈয়ালকে দলিল করে দিয়ে গেছেন। কথিত দলিল কেউ মানতে চায় না। বিষয়টি নিয়ে জব্বর ছৈয়াল বেশী বারাবারি করলে তাকে অবশিষ্ট জমির বড় অংশ দিয়ে পক্ষে নেন শুকুর আলী ছৈয়াল। অসহায় হয়ে পরে এতিমরা। মৃত টোকান আলী ছৈয়ালের মৃত ২ ছেলের ৫ এতিম সন্তানরা পায় ৪.৮০ শতাংশ। আর প্রতারক শুকুর আলী একাই পায় ১৪.৪০ শতাংশ। সেখান থেকে ২.৪০ শতাংশ দিয়ে জব্বর ছৈয়ালকে পক্ষে নেয় শুকুর। সেখানে জব্বার আলী ছৈয়ালের হয়ে যায় ৪.৮ শতাংশ।
মামলার বাদী ছোলাইমান ছৈয়াল জানায়, দাদার সাথে আমার বাবা ও বড় চাচা রঞ্জু ছৈয়াল কাজ কর্ম করত। ছোট চাচা শুকুর আলী ছিলেন বখাটে। পড়া লেখা করতেন না বা কাজও করতেন না। অন্য মানুষদের কাছ থেকে আমার দাদা জমি লিজে নিয়ে ফসল উৎপাদন করতেন। এক পর্যায়ে লিজ মুক্ত করে টাকা তুলে এবং পরিবারের সকলে মিলে টাকা জোগার করে এই চাচাকে বিদেশ পাঠায়। বিদেশ গিয়ে সেখানেও বখাটেপনা করে। তা আমার পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা সকলেই জানে। সংসারের জন্য বিদেশ থেকে কোনদিন এক টাকাও পাঠাতেন না। কয়েক বছর পরে বিমানের সিঙ্গেল টিকেট নিয়ে ছুটিতে বাড়ি আসে। যাওয়ার টিকেটও আমার বাবা ও বড় চাচা জোগার করে দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমার দাদা মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত উপার্যণক্ষম ছিলেন। দাদার মৃত্যুর পরে তার সঞ্চিত-গচ্ছিত টাকাও চাচা শুকুর ছৈয়াল আত্মসাৎ করেছে। অথচ আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে চাচা শুকুর আলী ও তার স্ত্রী মিলে আমাদের ২ ভাই-বোন সহ মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মা আমাদের নিয়ে ঢাকায় গিয়ে মহল্লায় মহল্লায় থান কাপুর বিক্রি করে আমাদের বড় করেন। আমার বোনের বিয়ে হয়েছে, আমারও সংসার হয়েছে। এখন বাবার ভিটায় ঘর তুলতে গিয়ে ছোট চাচা শুকুরের আসল রূপ দেখতে পাই। দাদার রেখে যাওয়া একমাত্র বাড়ির ২৪ শতাংশ জমির ১৪.৪০ শতাংশ তার একারই লাগবে। মেজ চাচা জববর ছৈয়াল বিষয়টি মানতে না চাইলে তাকে ৪.৮০ শতাংশ দিয়ে পক্ষে নেয় শুকুর। এখন ফাঁদে পড়ে আছি আমরা এতিম ৫ ভাই-বোন। অথচ ছোট চাচার একটি মাত্র মেয়ে। তাকেও বিয়ে দিয়েছে ঢাকায় বাড়ি আছে এমন পরিবারে। ছোট চাচায় জাল-জালিয়াতি না করে আমাদের তার সন্তানের মতো আগলে রাখতে পারতেন। চাচাকে অনেক বুঝিয়েও কোন ফল হয়নি। তাই আদালতে মামলা করেছি।
মৃত সোনাই ছৈয়ালের মেয়ে সোনিয়া আক্তার জানায়, আমার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বিয়ে হয়েছে। ছোটভাই ছোলাইমান বেকার ছিল। তাই ছোট চাচার মাধ্যমে ছোলেমানকে বাহরাইনে পাঠানোর জন্য টাকা দেই। সে আমার ভাইকে বাহরাইন না নিয়ে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করে। অনেক সালিস দরবার করে সেই টাকা তুলতে হয়েছে। অনেক দিন পরে চাচা আবার প্রস্তাব করে ছোলাইমানকে তখন নেওয়ার সুযোগ ছিল না তাই নিতে পারিনি। এখন সুযোগ হয়েছে ওকে নেওয়া এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেওয়ার। যত যাই হোক, আপন চাচাতো। তাই পুনরায় চাচার কথা বিশ্বাস করে তার ফাঁদে পা দেই। ছোট ভাইকে বাহারাইনে নেওয়ার জন্য ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেওয়ার জন্য পুনরায় টাকাও দেই। সেই টাকা নিয়ে সে নিজের নামে বাহরাইনে দোকান নিয়ে ব্যবসা করে। আমার ভাইকেও নেয় না বা টাকাও ফেরত দেয় না। বাড়িতে বিল্ডিং করে। অনেক সালিস দরবার করে এককালিন দেওয়া টাকা মাসিক কিস্তিতে আদায় করতে হয়েছে। সে চরিত্রগত ভাবেই একজন প্রতারক। আমার দাদা কোন ছেলের উপর নির্ভরশীল ছিলেন না। সে কোন দিনও তার একমাত্র বাড়ির সামনের রাস্তার পাশ দিয়ে কোন ছেলেকে জমি দলিল কওে দেয়নি। গত জানুয়ারী মাসে দলিল দেখার পরে দলিলের সনাক্তকারী ও সাক্ষিদের ঠিকানা খোঁজ করি। সনাক্তকারীর কোন অস্তিত্ব ঠিকানামতো পাওয়া যায়নি। ২ জন সাক্ষিদের মধ্যে একজন তাদের সাক্ষর অস্বীকার করে। অপরজন স্ট্যাম্প ভেন্টার। তার কাছ থেকে এক ব্যক্তি স্ট্যাম্প ক্রয় করে। পরে সেই ব্যক্তি ভেন্ডারকে অনুরোধ করে একটি সাক্ষির সাক্ষর দেওয়ার জন্য। তাই অনুরোধে সাক্ষর করেছেন। তিনি অনুরোধকারী ব্যক্তিকে চেনেন না বলে দাবী করেন। আমার চাচার দলিল যদি সঠিক হবে তাহলে দাদার মৃত্যুর ১ যুগ পরে তা বের করবে কেন? তাছাড়া দাদার সাথে আমাদের সম্পর্কের কোন অবনতি ছিল না। সেইবা কেন অপরিচিত ও অস্তিত্ব বিহীন লোকদের সাক্ষি বা সনাক্তকারী করে জমি দলিল করবেন? আমাদের বিশ্বাস আমার চাচায় অন্য কোন ব্যক্তিকে টোকানি ছৈয়াল দেখিয়ে জালিয়াতি করে দলিল সৃষ্টি করেছে। এই দলিলের কোন ভিত্তি নাই বলে আমরা দাবী করছি।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত শুকুর আলী ছৈয়াল বলেন, আমার বাবা দলিল দিয়েছে। বাবার দুই বন্ধু আর হামেদ মামার দুই বন্ধু দলিলের সনাক্তকারী ও সাক্ষি। আমার দলিল খাটি কোন সমস্যা নাই।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।