Saturday, 26th April, 2025

বৈশাখী মেলায় মৃৎ শিল্পের পণ্য বিক্রিতে লোকসানের শঙ্কা

বৈশাখী মেলায় মৃৎ শিল্পের পণ্য বিক্রিতে লোকসানের শঙ্কা
বৈশাখী মেলার জন্য এসব পণ্য তৈরি করেছেন মৃৎশিল্পিরা। ছবি- দৈনিক হুংকার।

প্রবীন মৃৎ শিল্পী মনিলাল পালের বয়স ৯০ বছর। এ বয়সেও তিনি মাটির খেলনায় নকশা তোলেন। কারখানার সামনে বাড়ির উঠানে বসে মাটির খেলনা ও টেরাকোঠায় নকাশা তুলছিলেন ওই শিল্পী। পরম যত্নে নকশা তোলার কাজটি করলেও মনে আনন্দ ও স্বস্তি নেই। এ বছর ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। তাদের পারিবারিক কারখানাটিতে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। এমন জানার পরই মনিলালের মনে শান্তি নেই।
শুধু মনিলাল পালদের কারখানই নয় এ বছর শরীয়তপুরের অন্তত ২০টি মাটির খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরির কারখানায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন মৃৎ শিল্পীরা। চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে যে মেলার আয়োজন করা হয় এ বছর তার প্রস্তুতি কম। তাই মৃৎ শিল্পের কারখানা গুলোতে ওই সকল মালামালের অর্ডার কম হয়েছে। কারখানা গুলোতে যে মালামাল বানানো হয়েছে তাও সব বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের কার্তিকপুর গ্রামের মনিলাল পাল বলেন, ১৫ বছর বয়স হতে মাটির বিভিন্ন পন্য তৈরি করছি। একসময় বিভিন্ন তৈজষপত্রের চাহিদা ছিল। তখন তা তৈরি করেই সংসার চালিয়েছি। প্লাষ্টিকের পণ্যের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে আর পেরে উঠিনি। তাই ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন খেলনা, টেরাকোঠা তৈরি করছি। এগুলোর বেশ চাহিদা। গত ২৫ বছরের মধ্যে এবছর মেলার আয়োজন কম, তাই আমাদের বিক্রি কম। একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছে। কারখানা টিকিয়ে রাখতে পারব কিনা।
মৃৎ শিল্পী ও এ পণ্য বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুরের সদর, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা উপজেলায় ২০টি মাটির পণ্য তৈরি করার কারখানা রয়েছে। ওই কারখান গুলোতে অন্তত ৮০০ হতে ১০০০ শ্রমিক কর্মরত। কারখানা গুলোতে নানা ধরণের টেরাকোঠা, বিভিন্ন ধরণের তৈজষপত্র, শোবিজ সারা কছর ধরে তৈরি করা হয়। এ ছারা বিজয় দিবস, মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, মাজারে মেলা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা, চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে বৈশাখি মেলায় বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন খেলনা, টেরাকোটা, শোবিজ,ঘর-গৃহস্থরিতে ব্যবহারের নানা পণ্য মৃৎ শিল্পীরা তৈরি করেন। মৃৎ শিল্পীদের কাছ থেকে ওই সকল পণ্য পাইকারি নিয়ে বিভিন্ন মেলায় তা বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন কম হয়েছে। তাই মৃৎ শিল্পের কারখানা গুলোতে ওই সকল পণ্য তৈরির অর্ডার কম দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর পালপাড়ায় ছোট-বড় ৬টি কারখানা। তার একটি জয় মৃৎ শিল্প। কারখানাটিতে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি বছর ৭০ লাখ হতে ৮০ লাখ টাকার পন্য তৈরি হয় কারখানাটিতে। এ বছর পন্যের অর্ডার কমেগেছে। অর্ডার কমে অর্ধেকে নেমেছে।
কারখানাটির পরিচালক গোপাল কৃষ্ণ পাল বলেন, প্রতি বছর নভেম্বর হতে এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা অনুষ্ঠান ঘিরে মেলার আয়োজন হয়। এ বছর মেলার আয়োজন কম। ওই মেলা গুলোতে আমাদের তৈরি মাটির বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়। পাইকাররা অন্তত ২-৩ মাস আগে থেকে মালামালের অর্ডার করেন। এবছর অর্ডার নেমে এসেছে অর্ধেকে। আমাদের কারখানায় এ বছর ১০ লাখ হতে ১২ লাখ টাকার লোকসানের আশঙ্কা করছি।
কার্তিকপুরের মৃৎ শিল্পী সুধির পাল সারা বছর ধরে সনাতন ধর্মালম্বিদের বিভিন্ন প্রতিমা তৈরি করেন। তার স্ত্রী চিনু রানী পাল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাটির খেলনা ও বৈশাখি মেলায় বিক্রির বিভিন্ন পণ্য তৈরির কারখানা চালান। এ বছর চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখি মেলা উপলক্ষ্যে ৮-১০ লাখ টাকার বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেছেন। এখনো কোন পণ্য বিক্রি করার অর্ডার পাননি।
চিনু রানী পাল বলেন, মাটির দাম বেশি, রং, লাকরিসহ বিভিন্ন জিনিষের দাম আকাশ ছোয়া। তা মেনেই বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেছি মেলায় বিক্রি করার জন্য। এখনো কোন মালামাল বিক্রির অর্ডার পাইনি। পুরাতন পাইকারদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদের অনেকেরই আগ্রহ নেই। অনেকে বলেছেন মেলার আয়োজনের ওপর নির্ভর করে তারা আমাদের তৈরি জিনিষপত্র নেবেন। এমন হবে জানলে এতো টাকা লগ্নি করতাম না। এখন লাভতো দুরের কথা মুলধন তুলতে পারব কিনা তা নিয়েই শঙ্কায় আছি।
বিভিন্ন স্থানে মেলায় মালামাল বিক্রি করেন জাজিরার তৈয়ব আলী নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, নভেম্বর হতে আমাদের দেশে নানা ধরণের মেলার মৌসুম শুরু হয়। দেশের সামগ্রীক পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলার আয়োজন একেবারেই সীমিত। অনেক স্থানে একেবারেই বন্ধ। চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখি মেলা হবে কিনা তাও বুঝা যাচ্ছে না। তাই মেলায় বিক্রি করার জন্য মালামাল প্রস্তত করার অর্ডার দেয়া হয়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।