
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান। আতঙ্কে থাকেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তরা। ভেঙে পরেছে ছাদের একাংশ। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান। এতে করে ৫০ নং রামরায় কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।
জানা যায়, ১৯৮৩ সালের স্থাপিত বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা একশ’র অধিক। পাঁচজন শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হয় এই বিদ্যালয়টি। ১৯৯৫ সালে তিন রুমের একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এর পর ২০১৩ সালে দুই রুম বিশিষ্ট আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে খেলা করছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে ঢুকতেই ঝড়াঝর্ন ভবনটি। ভবনটির এক পাশে ভাঙ্গা। পুরো ভবনটির পিলার, দেয়াল ও ছাদের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে রড। ক্লাস রুমের সংকট হওয়ায় ভাঙা ভবনেই চলছে ক্লাস। কখন ভেঙে পড়ে সেই ভয়ে ক্লাস করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আবার একটি রুমে পর্দা টেনে হচ্ছে দুইটি ক্লাস। এতে করে যেমন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কমছে তেমনি ক্লাস করতে সমস্যা হচ্ছে শিক্ষকদের।
তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তুবা বলেন, মাঝে মধ্যেই ছাদ থেকে প্লাস্টার পড়ে আমাদের মাথার উপরে। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে সিমেন্টের আস্তর উঠে রড দেখা যাচ্ছে। আমাদের খুব ভয় করে আমাদের ক্লাসে কখন ভেঙে পড়ে সেই জন্য।
আরেক শিক্ষার্থী মুনতাহ ইসলাম বলেন, আমরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করি। কখন ছাদ থেকে ইটের গুঁড়া পড়ে। আবার কখনো ছাদের আস্তর পড়ে। আমাদের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হয়। কারণ ক্লাসের সংখ্যা কম তাই।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাসান বলেন, হঠাৎ করেই ক্লাস চলা কালিন সময়ে ছাদ থেকে খসে পড়ে পলেস্তোরা। একদিন আমার মাথায় সেঁটি পড়ে। বৃষ্টিতে ক্লাসরুমের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে পানি পড়ে। তাই ইস্কুলে আসতে ভয় লাগে আমার। এছাড়া ছাদের ও দেয়ালের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে রড বেরিয়ে গিয়েছে। এখন আবার আমরা দুইটি ক্লাস একসাথে করছি। পঞ্চম শ্রেণী ও চতুর্থ শ্রেণীর একসাথে ক্লাস করছি। এতে করে আমাদের সমস্যা হয়। এক রুমে দুইটি ক্লাস করলে আমাদের শিক্ষক যা বলে আর ওদের শিক্ষক যা বলে এতে গুলিয়ে যায়। এতে ক্লাসের সমস্যা হয়। যদি নতুন একটি ভবন হয় তাহলে আমাদের এই সমস্যাটি দূর হয়।
অভিভাবক আবুল কালাম বলেন, ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকি কখন জানি দুর্ঘটনা ঘটে। ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা খুব জরুরি । যেহেতু এটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জায়গা তাই তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫০ নং রামরাইকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যায় আছি আমরা। গত কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদে গাছ পড়ার কারণে ধষে পড়ে এক অংশ। এছাড়া বিদ্যালয়ের ভবনটির বিভিন্ন জায়গা দিয়ে প্লাস্টার উঠে রড বেরিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা ভয় পায় ওখানে ক্লাস করতে। কিন্তু আমাদের উপায় নেই। শিক্ষার্থী থাকায় ক্লাস নিতে সমস্যা হয়। এছাড়া আমরা শিক্ষা অফিসের পরামর্শে এক রুমে দুইটি ক্লাস করাচ্ছি। বিদ্যালয়ের ভবনের সমস্যার কারণে দিন দিন আমাদের স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমছে। কারণ অভিভাবকরা ঝুঁকি নিয়ে তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চায় না। আমরা আশায় আছি বিদ্যালয় ভবনটি হলে আমাদের সমস্যার সমাধান হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুকণ্ঠ ভক্ত বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুমে যে সংকট সেটি দীর্ঘদিন ধরেই। এই বিষয়ে আমরা উপজেলা এলজিইডি অফিস কে জানিয়েছি।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।