
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আ.লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ককটেল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এ পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র্যাব। জাজিরায় থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতরা হলেন বিলাশপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সাদ্দাম হোসেন (৩০), শাহ আলম (৪২) শাহজাহান মাদবর (৪৪), মতিউর রহমান (৪৭), শেখ আবদুল মালেক (৫৫),শাহাবুদ্দিন মাদবর (২৩) ও শহর আলী মাদবর কে (৫০) ও র্যাবের হাতে ঢাকায় গ্রেফতার হন মামলার প্রধান আসামী আওয়ামীলীগ নেতা ও চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী।
রবিবার (৬ এপ্রিল) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দুলাল আকন্দ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কুদ্দুস বেপারী ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জলিল মাদবরের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে। শনিবার (৫ এপ্রিল) সকালে ইউনিয়নের কাজিয়ারচর এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় বাড়িঘর ভাংচুরসহ শতাধিক হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে একজনের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হওয়া সহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। আহতদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় রবিবার সকালে জাজিরা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার দাস বাদী হয়ে দুই গ্রুপের ৮৮ জনের নাম উল্লেখসহ এক হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে জাজিরা থানায় একটি বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেছেন। ঐ মামলায় এখন পর্যন্ত আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জাজিরা থানা পুলিশ ও র্যাব-৮।
এর মধ্যে বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কুদ্দুস বেপারীকে গত রাতে র্যাব-৮ ও র্যাব-৩ এর অভিযানিক দল যৌথ অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে। বাকি সাত জনকে বিলাসপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী।
এ বিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দুলাল আকন্দ বলেন, বিলাসপুরে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ককটেল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জাজিরা থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। ইতোমধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
এদিকে র্যাব-৮ মাদারীপুর এর কোম্পানি কমান্ডার, পুলিশ সুপার মোঃ মনির হোসেন, কুদ্দুস বেপারীকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মুঠোফোনে বলেন, র্যাব ৮ ও র্যাব ৩ এর যৌথ অভিযানে ঢাকার মোমিনবাগ এলাকা থেকে গত রাত একটার দিকে প্রধান আসামী কুদ্দুস বেপারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি এখন র্যাবের হেফাজতে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট এর পর পুলিশ জাজিরা উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ও বিলাসপুর ইউনিয়নের সেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি ও পরাজিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জলিল মাদবরকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। তবে সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ফের উত্তপ্ত হয় বিলাসপুর। গতকাল শনিবার কুদ্দুস বেপারীর সমর্থক সালাউদ্দিন মাস্টার গ্রুপ ও জলিল মাদবরের গ্রুপ এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে জানা যায়।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।