Sunday, 8th June, 2025

সৌদি হজ্ব মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ওমরার দরজা খুললো, যেতে পারবে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আবারো তাদের কাঙ্খিত পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ এবং নবী করিম (স.) রওজা মোবারক জিয়ারাতের সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় থমকে দাঁড়ানো সারা পৃথিবীর মুসলমানদের জন্য ২৫ জুলাই-২০২১ রোববার এমনই সুসংবাদ জানালেন সৌদি সরকার।
আগামী ১০ আগস্ট থেকে বাইরের দেশের নাগরিকরা ওমরা পালনের সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছে হজ্ব ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনকারি দেশটি।
দেশটির কর্মকর্তারা এর জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন স্থানীয় ওমরাহ কোম্পানীসহ বাইরের ৬ হাজারের বেশি ওমরাহ এজেন্সিকে।
কোন কোন দেশের নাগরিকরা ওমরাহ পালনের এই সুযোগ পাবেন তা এখনও বিস্তারিত জানানো হয়নি। তবে ৯টি দেশ থেকে সৌদি আরবে সরাসরি বিমান ফ্লাইট উঠা নামায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশ এই দেশেগুলোর তালিকায় নেই। বাংলাদেশের হজ্ব ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িতরা বলছেন, এদেশের মানুষ এবার ওমরায় যেতে পারবেন। তবে কবে থেকে যেতে পারবেন তা এখনো সৌদি আরবের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। এছাড়া প্রস্তুতিরও কিছু বিষয় রয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম রবিবার বিদেশেীদের জন্য ওমরার অনুমতির বিষয়টি জানায়।
বলা হয়েছে ১৪৪৩ হিজরী সনের ১ মহররম অর্থাৎ আগামী ১০ আগস্ট থেকে ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক মুসল্লিরা দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন।
চলতি বছরের সীমিত পরিসরে সফলভাবে হজ্ব পালনের পর সৌদির নাগরিক ও সেখানে বসবাসকারি বাইরের লোকেরা রোববার থেকেই ফের ওমরাহ পালন করতে পারছেন।
করোনাকালে অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন এবং বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ওমরার কাজ চলে আসছিল সীমিতি আকারে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মসজিদুল হারাম ও কা’বা চত্বরে মানুষের ধারণ ক্ষমতার আলোকে স্বল্প সংখ্যক সৌদি নাগরিক ও সৌদি প্রবাসীরা ওমরার সুযোগ পাচ্ছিলেন।
হজ্বের প্রস্তুতির জন্য জ্বিলহজ্জ মাসের প্রথম সপ্তাহে ওমরাহ পালন স্থগিত করা হয়। গত ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয় পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে, হজ্ব মৌসুম শেষ হওয়ায় ওমরাহ পালনের জন্য রবিবার থেকে ইসলামিক পবিত্র স্থাপনাগুলো পুণরায় খুলে দিয়েছে সৌদি আরব। মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত উপ-প্রধান সাদ বিন মোহাম্মদ আল-মুহাইমিদ জানান, ‘ইবাদতকারী ও ওমরাহ পালনকারীদের গ্রহণে প্রস্তুত পবিত্র মসজিদুল হারাম।’
সউদীর হজ্ব ও ওমরাহ বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য হানি আল-ওমাইরি আল আরাবিয়াকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানান, ওমরাহ পালন করতে আসা বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করোনা সংক্রান্ত সব ধরণের সাবধানতা ও নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে মেনে চলা হবে।
এদিকে বাইরের দেশ থেকে ওমরাহ পালনে সউদীতে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক মুসল্লিদের জন্য কিছু শর্ত আরোপ করেছে দেশটি। কেবল ৯টি দেশ ছাড়া বিশ্বের সকল দেশ থেকেই সরাসরি ফ্লাইটে সউদী আরবে প্রবেশ করা যাবে। অর্থাৎ টিকার দুটি ডোজগ্রহণকারিরা সরাসরি সৌদি আরব যেতে পারবেন।
এই ৯টি দেশ হচ্ছে- ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও লেবানন। এই দেশগুলো থেকে কোনো মুসল্লি সউদী আরবে প্রবেশ করতে চাইলে তৃতীয় কোনো দেশে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
এছাড়া ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে করোনার টিকার উভয় ডোজ গ্রহণ সম্পন্ন করতে হবে।
টিকা হতে হবে ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা জনসন অ্যান্ড জনসনের। তবে যারা চীনের তৈরি টিকার উভয় ডোজ নিয়েছেন, ওমরাহ পালনে সউদী আরবে ঢুকতে হলে তাদেরকে ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার বাড়তি বুস্টার ডোজ গ্রহণ করতে হবে।
১৮ বছর বা এর ঊর্ধ্ব বয়সীরাই কেবল ওমরাহ পালনের অনুমতি পাবেন। এছাড়া সউদী আরবের হজ্ব ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় থেকে স্বীকৃত ওমরাহ এজেন্সির মাধ্যমেই নিজ নিজ দেশের ওমরাহ এজেন্সির নামে অনলাইনে নাম নিবন্ধন করে ভিসা পাওয়ার মধ্য দিয়ে কেবল সউদী আরবে যেতে পারবেন আগ্রহীরা।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি আরব গত বছরের মার্চ মাসে ওমরাহ পালন স্থগিত করে। পরবর্তীতে একই বছরের অক্টোবর মাসে সীমিত আকারে ওমরাহ পালনের অনুমতি দেয় দেশটি। ওই বছরের পহেলা নভেম্বর থেকে বাইরের দেশের মুসলমানরা ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যেতে শুরু করেছিল। পরে করোনার প্রকোপ বিশ্বব্যাপী বেড়ে যাওয়ার তা স্থগিত করে। শুধু সৌদি আরবের নগারিক ও সেখানে বসবাসকারি বিদেশেী নাগরিকেদের জন্য সুযোগ রাখা হয়। অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে নির্ধারিত সময়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এই কাজটি চলে আসছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৮ হাজারের বেশি মানুষ।
গেল বছর মাত্র ১০ হাজার মানুষকে নিয়ে সফলভাবে হজ্ব পালনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ওমরাহ চালু করা হয়েছিল। এবছর ৬০ হাজার মানুষ পবিত্র হজ্ব পালন করেছেন। হজ্বযাত্রীদের কারোরই করোনা সংক্রমনের রিপোর্ট নেই বলে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সফল হজ্ব ব্যবস্থাপনার পরপরই সৌদি সরকার স্থানীয়ভাবে ওমরার জন্য মসজিদ হারামকে খুলে দেয়ার পাশাপাশি বাইরের দেশের নাগরিকদের জন্যও ওমরাহ পালনের সুযোগের সুসংবাদটি দিলো।
বাংলাদেশের বেসরকারি হজ্ব ব্যবস্থাপনাকারি সংগঠন-হজ্ব এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ হাব এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, সৌদি সরকার ওমরার অনুমতি দিয়েছে এটা সত্য। কিন্তু এর মানে আগামী ১০ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ থেকে ওমরায় যাওয়া যাবে-বষয়টি এমন নয়। বাংলাদেশের এজেন্সিগুলোর প্রস্তুতির কিছু বিষয় রয়েছে। সৌদি ওমরাহ কোম্পানীগুলোর সাথে তাদের চুক্তিসহ কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। এগুলো শেষ করতে সময় লাগবে।
তিনি আরো বলেন, ভিসার ব্যাপারে এক এক অঞ্চলের দেশের জন্য সৌদি সরকারের আলাদা আলাদা নীতি রয়েছে। হয়তো অনেক দেশ আগে থেকেই ওমরার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। তারা হয়তো পহেলা আগস্ট থেকেই ওমরাহ যাত্রী পাঠাতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিতে এক মাস কিংবা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। প্রতি বছর ওমরাহ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মানুষ পবিত্র ওমরাহ পালন করতে যান। গেল বছর মার্চ মাসে করোনা ভাইরাস অতিমারিতে রূপ নেয়ার পর ওমরাহ বন্ধ হয়ে পুণরায় সীমিত আকারে চালু হলেও এ পর্যন্ত বাংলাদেশের কেউ ওমরায় যেতে পারেননি। ওমরাহ ব্যবস্থাপনা এজেন্সিগুলো ও ওমরাহ যাত্রীরা হজ্ব ও ওমরাহ পুণরায় শুরুর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।