
শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি এলিম পাহাড়ের বিরুদ্ধে সদর হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৪ মে) দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এমন ঘটনা ঘটেছে। ওই দুই চিকিৎসক হলেন সদর হাসপাতালের তত্ববধায়ক হাবিবুর রহমান ও মেডিকেল অফিসার শাহরিয়ার ইয়াছিন। এদের মধ্যে শাহরিয়ার ইয়াছিনকে মারধর করা হয়েছে। আর হাবিবুর রহমানকে ধাক্কা দিয়ে, টানাহ্যাচরা করে গালিগালাছ করা হয়েছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর পৌরসভার বালুচরা গ্রামের বাসিন্দা এলিম পাহাড়। তিনি বর্তমানে শরীয়তপুর আন্তঃজেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি। শনিবার একটি মারামারির ঘটনায় তার কিশোর পুত্র মাথায় আঘাত পান। তাকে নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে আসেন কয়েকজন। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন এলিম পাহাড় নিজেই। জরুরী বিভাগে ওই কিশোরের চিকিৎসা চলছিল। দ্রুত কেন চিকিৎসা দেয়া হচ্ছেনা এমন অভিযোগ এনে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের গালমন্দ করতে থাকেন তিনি। তখন জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত নারী চিকিৎসক লিমিয়া সাদিনাকে গালমন্দ করলে সেখানে উপস্থিত চিকিৎসক শাহরিয়ার ইয়াছিন এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তখন তার শার্টের কলার ধরে তাকে মারধর করা হয়। এ সময় ওই চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তছনছ করে ফেলে দেয়া হয়। এমন ঘটনা শুনে জরুরী বিভাগে ছুটে যান সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান। তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে টানাহ্যাচরা করা হয়। তাকেও গালাগালি করা হয়। পরে ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হলে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ হাসপাতালে যান। ততক্ষনে এলিম পাহাড় ও তার সাথে থাকা লোকজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। আর চিকিৎসকরা এলিম পাহাড়ের কিশোর পুত্রকে আন্ত বিভাগে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।
হামলার শিকার সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহরিয়ার ইয়াছিন বলেন বলেন, আজকে দুপুর সারে ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছিলেন ডাক্তার লিমিয়া। যে রোগীটা আসছে সেই রোগীটাকে কিন্তু ডাক্তার লিমিয়া একবার দেখেছেন। দেখার পরে ড্রেসিং করার জন্য হ্যান্ড গ্লাভস পড়তে ছিলেন। আর তখনই আমি তার পাশে আমাদের চিকিৎসকদের কক্ষে কিছু প্রশাসনিক কাজ করতেছিলাম। এর মধ্যে এলিম পাহাড় এসে লিমিয়ার উপরে চড়াও হয়। খারাপ ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন। আমি প্রতিবাদ করলে এলিম পাহাড় আমার গলা চেপে ধরে কিল ঘুসি ও থাপ্পর মারেন। আমার গলার অবস্থা ভালো না। এখনও ভালোভাবে কথা বলতেও পারছি না।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের এক চিকিৎসককে রোগির স্বজনরা মারধর করছেন। এমন খবরে আমি জরুরি বিভাগে যাই। ওই রোগীর স্বজন আমার উপরে চড়াও হয়ে আমাকে টানা হেঁচড়া করেন। এখন বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। আমাদের সকলের সাথে কথা বলে আইনগত পদক্ষেপ নেব।
চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ’র শরীয়তপুর জেলা কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনাটিতে চিকিৎসকরা শঙ্কিত ও আতঙ্কিত হয়ে পরেছেন। তারা দায়িত্ব পালন করতে সাহস পাচ্ছেন না। আমরা ওই ব্যক্তির দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করছি। তার কঠোর শাস্তি না হলে আমরা কর্ম বিরতির মতো আন্দোলন কর্মসূচী দেব।
ঘটনাটি জানতে এলিম পাহাড়ের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মেজবাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করার তথ্য পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। সেখান থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। এখন ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা লিখিত অভিযোগ করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।