Sunday, 8th June, 2025

মাদারীপুরে জোড়া খুনের রহস্য উদ্ঘাটন

মাদারীপুরে জোড়া খুনের রহস্য উদ্ঘাটন
পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত মাদারীপুর কালকিনিরি জোড়া খুন মামলার আসামী আশরাফুল মোল্লা।

মাদারীপুরের কালকিনির জোড়া খুন মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে গোপালগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই মামলার এজাহারনামীয় আসামী আশরাফুল মোল্লা (৩৮) কে নড়াইল জেলার বোড়ামারা এলাক থেকে ২২ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী নড়াইল সদর উপজেলার বোড়ামারা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে।
পিবিআই’র গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ মাদারীপুরের কালকিনি থানার এই হত্যা মামলা তদন্ত শুরু করেন। পিবিআই পুলিশের উপপরিদর্শক মো. আল আমিন শেখসহ পুলিশের একটি টিম তদন্তে সহযোগিতা করে।
মাদারীপুরের কালকিনি থানাধীন কোলচড়ী স্বস্তাল গ্রামের হাফেজ সরদারের ছেলে মোয়াজ্জেম সরদার (৫০) ও তার পুত্রবধু মাকসুদা বেগম (৪৫) গত ৫ এপ্রিল রাতে নিজ বাড়ি হতে নিঁখোজ হয়। উক্ত ঘটনায় নিখোঁজ দম্পতির জামাতা এমরান সরদার (৩০) বাদী হয়ে কালকিনি থানার মামলা দায়ের করে। ৯ এপ্রিল স্থানীয়রা বাড়ির নিকটবর্তী নির্জনে তাদের মরদেহ দেখে কালকিনি থানা পুলিশকে অবগত করে। পুুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত পরবর্তী মর্গে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে পিবিআই গোপালগঞ্জ স্ব-উদ্যোগে মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে। তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে নড়াইল থেকে মামলার প্রধান আসামী আশরাফুল মোল্লাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী জানায়, নিহত মোয়াজ্জেম সরদার গত ২৮ মার্চ ফরিদপুর কৃষেন (শ্রমিক) হাট থেকে কৃষি কাজ করার জন্য আসামী আশরাফুল মোল্লা এবং ভোলারাও নামের দুই জন শ্রমিক বাড়ীতে নিয়ে আসে। বাড়ীতে নিহত দম্পতি তাদের কন্যা আন্তানুর (১৪) ও নুসরাত (০৬) কে নিয়ে বসবাস করতো। আসামী আশরাফুল মোল্লা ওই বাড়িতে কাজে যাওয়ার পর থেকেই কন্যা আন্তানুরের প্রতি তার কু-দৃষ্টি দেয়। আসামী আশরাফুল মোল্লা সুযোগ পেলেই আন্তানুরের সাথে গল্প করতো এবং সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করতো। বিষয়টি মোয়াজ্জেম সরদার ও মাকসুদা বেগমের নজরে আসলে তারা মেয়ের সাথে আশরাফুলকে কথা বলতে নিষেধ করে দেয়। এতে আশরাফুল মোল্লা ক্ষিপ্ত হয়ে আন্তানুরের যৌন লালসা চরিতার্থ করার সুযোগ খুজতে থাকে। পরিকল্পনা করে আন্তানুরের বাবা-মাকে খুন করার। ঘটনার রাতে আশরাফুল তার পূর্ব পরিকল্পনা মতে প্রথমে মোয়াজ্জেম সরদারকে কৌশলে বসতভিটা থেকে আনুমানিক ২৫০ গজ দুরে নির্জন স্থানে ডেকে নেয়। সেখানে তার গলায় গামছা পেচিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে একই কৌশলে মাকসুদা বেগমকে একই স্থানে ডেকে নিয়ে একই গামছা দিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে। ওই রাতেই আসামী আশরাফুল মোল্লা নিহত দম্পতির বাড়িতে গিয়ে তার গৃহে প্রবেশ করে এবং নাবালিকা মেয়ে আন্তানুরকে ফুসলিয়ে কৌশলে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। যাবার সময় আসামী আশরাফুল মোল্লা নিহত দম্পতির ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। মোবাইল ফোন দুইটি আসামীকে গ্রেফতার করার সময় তার হেফাজত হতে উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামী আশরাফুল মোল্লা ইতিপূর্বে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার ভূয়া পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অভিভাবকদের ফুসলাইয়া বিভিন্ন নারীদের সহিত শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করিয়া আসিতেছিল। ইতিপূর্বে আসামী আশরাফুল মোল্লার বিরুদ্ধে যশোর, নড়াইল ও রাজশাহীতে ৫টি মামলা চলমান রয়েছে। আসামী আশরাফুল মোল্লাকে ২৩ এপ্রিল আদালতে হাজির করে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারামতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।
পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর নেতৃত্বে ও বিপিএম (বার) পিপিএম, ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশনায় এবং এসআই মোঃ আল-আমিন শেখ সহযোগিতায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।