Monday, 23rd June, 2025

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অভ্যন্তরে-১, নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে শরীয়তপুর জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অভ্যন্তরে-১, নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে শরীয়তপুর জেলার
পরিবার পরিকল্পন অধিদপ্তর। ছবি-দৈনিক হুংকার।

শরীয়তপুর জেলায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে পড়েছে। উপজেলা গুলোতে ভেঙ্গে পড়েছে কার্যক্রম। জেলা কার্যালয় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়েও এর প্রভাব পড়েছে। কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা। অপর পক্ষে জনবল সংকটকে দায়ী করেছেন জেলা ও উপজেলার কর্মকর্তাবৃন্দ।
জাজিরা উপজেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের ৩টি ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ৫টি। জাজিরা, বড়কান্দি, কুন্ডেরচর ও পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নে কোন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র নাই। ৫২টি পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা পদের মধ্যে ২৫টি পদ শূণ্য রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের ১২টি পদের মধ্যে ৫টি শুন্য। স্বাস্থ্য বিভাগের নার্স রুদ সাহা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে গিয়ে ডিএনসিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। যাহা বিধি বহির্ভূত। পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা সানজিদা রহমানের ডাকে রুদ সাহা আসেন বলে তিনি দাবী করেন।
উপজেলার জাজিরা, বড়কান্দি, কুন্ডেরচর, মুলনা ইউনিয়নে গিয়ে চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষের সাথে আলাপ করে জনাগেছে, শিরিন বকুল নামে একজন পরিবার কল্যান পরিদর্শিকার দায়িত্ব দেয়া রয়েছে জাজিরা ইউনিয়নে। অথচ দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শিকা শিরিন বকুল জাজিরা ইউনিয়নে মাসে ৮ দিন স্যাটেলাইট ক্লিনিকে সেবা প্রদান করে অন্যান্য দিন জাজিরা সদর হাসপাতালে অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। দৃশ্যের পরিবর্তন হয়নি কুন্ডেরচর ও বড়কান্দি ইউনিয়নের ক্ষেত্রেও। সাদিয়া ইসলাম কুন্ডেরচর ইউনিয়ন পরিবার কল্যান কেন্দ্রে মাসে ৮ দিন দায়িত্ব পালন করে অন্যান্য দিন জাজিরা সদর হাসপাতালে এবং বড়কান্দি ইউনিয়নের পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা তুরিন আফরোজ ৮ দিন দায়িত্ব পালন করে অন্যান্য দিন মুলনা ইউনিয়ন পরিবার কল্যান কেন্দ্রে বসে থাকেন। অথচ জাজিরা উপজেলা সদর ক্লিনিকে দায়িত্বরত রয়েছেন সানজিদা রহমান। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকাদের কারণে হজবরল পরিবেশ হয় বলে দাবী করেন দায়িত্বরত সানজিদা রহমান।
অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী শিরিন বকুল, তুরিন আফরোজ ও সাদিয়া ইসলামের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তার আদেশবলেই তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ বড় গোপালপুর ইউনিয়নে পরিবার কল্যান কেন্দ্র থাকলেও জনবল শূণ্য রয়েছে। এদের কেই বড় গোপালপুর পরিবার কল্যান কেন্দ্রে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলে সাপ-লাঠি দুটোই রক্ষা হতো।
জাজিরা, কুন্ডেরচর ও বড়কান্দি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মার ভাঙ্গন কবলিত প্রত্যন্ত চরাঞ্চল। সেখান থেকে উপজেলা ক্লিনিকে আসতে ৪-৫ ঘন্টার বেশী সময়ও লাগে অনেকের। সেই সকল ইউনিয়নে পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা থাকা সত্ত্বেও মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। সেবা বঞ্চিতরা জানায়, আরাম আয়েশ ও অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্যই গাদাগাদি করে সদর ক্লিনিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন শিরিন বকুল ও সাদিয়া রহমান। যাহা সাধারণ মানুষের কোন কাজেই আসেনা।
জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষ পরিবার কল্যান পরিদর্শিকার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবুও পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা শিরিন বকুল সেখানে বসে না। তাই জাজিরা ইউনিয়নবাসীকে ভোগান্তীর শিকার হতে হয়। কোন অতিরিক্ত সুবিধা পেতেই সদর ক্লিনিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন সে।
জাজিরা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, জনবল সংকট নিয়ে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। উপ-পরিচালকের আদেশ বলে শিরিন বকুল ও সাদিয়া ইসলাম সদর ক্লিনিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। একই আদেশ বলে তুরিন আফরোজ রয়েছে মুলনায়।
বুধবার দুপুরে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে গিয়ে উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, অফিস সুপার ও হিসাব রক্ষকদের পাওয়া যায়নি। তখন অন্যান্য কর্মচারীরা জানায়, উপ-পরিচালক ফরিদপুরে, সহকারী পরিচালক ও হিসাব রক্ষক ঢাকায়, অফিস সুপার মাদারীপুরে রয়েছেন।
পরিবার পরিকল্পনার জেলা উপ-পরিচালক সোহেল পারভেজ মুঠো ফোনে বলেন, সঠিক ভাবেই তাদের সেবা চলছে। অতিরিক্ত আদেশ পালনের জন্য কাউকে আদেশ দেওয়া হয়েছে কিনা তা না দেখে বলা যাবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।