Sunday, 8th June, 2025

চলে গেলেন ফুটবল যাদুকর ম্যারাডোনা

১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের প্রায় একক অধিপতি, আর্জেন্টাইন ফুটবল যাদুকর দিয়াগো ম্যারাডোনা আর নেই। তিনি গতকাল বুধবার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
আর্জেন্টিনা ক্রীড়া দৈনিক ওলে দুঃসংবাদটি জানিয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়েছিল তার। হাসপাতাল ছেড়ে ফিরেছিলেন নিজ বাড়িতে। কে জানতো, পৃথিবীতে তার জন্য অপেক্ষা করছিল আর কয়েকটা দিন। মাত্র ৬০ বছর বয়সে কোটি ফুটবলভক্তকে কাঁদিয়ে অন্য পারের বাসিন্দা হলেন বাঁ পায়ে অসংখ্য মুহূর্তের জন্ম দেওয়া ফুটবল যাদুকর।
এ মাসের শুরুতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য অস্ত্রোপচার করাতে হয় সাবেক নাপোলি ও বোকা জুনিয়র্স তারকাকে। প্রথম দিকে দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু অ্যালকোহল আসক্তির কারণে নানা জটিলতা দেখা দেওয়ায় অনেক বেশি সময় সেখানে থাকতে হয়। যদিও তার চিকিৎসকদের অভিযোগ ছিল, জীবনের প্রতিটি সময় নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের স্বভাবসুলভ আচরণে মগ্ন থাকা ম্যারাডোনা হাসপাতালে থাকতে চাননি। চিকিৎসকের নিষেধের পরও হাসপাতাল ছাড়তে উঠে পড়ে লেগেছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত গত ১২ নভেম্বর অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল ছাড়েন ম্যারাডোনা। তবে গতকাল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে থেমে গেল তার জীবনযাত্রা। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) এক টুইট বার্তার খবরটি নিশ্চিত করেছে, ‘আমরা ভীষণ শোকার্ত আমাদের কিংবদন্তির মৃত্যুতে। আপনি সবসময় থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।’
আর্জেন্টিনার জেতা সবশেষ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোর আসরে বলতে গেলে প্রায় একাই চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন লাতিন আমেরিকার দেশটিকে। ওই বিশ্বকাপেই ফুটবল বিশ্ব দেখেছিলেন তার ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলটি। ক্লাব ফুটবলে নাপোলিকে দিয়েছিলেন লিগ শিরোপার স্বাদ। ইতালিয়ান এই ক্লাবে যাওয়ার আগে খেলে গিয়েছিলেন বার্সেলোনার জার্সিতে। আর ক্যারিয়ারের শেষটা করেছিলেন বোকা জুনিয়র্সে।
১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনার বুইয়েন্স আইরিসে জন্ম নেওয়া এই ফুটবল কিংবদন্তি আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৯১ ম্যাচে করেছেন ৩৪ গোল। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। ২০০৮ সালে দায়িত্ব নিয়ে আলবিসেলেস্তেদের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন ২০১০ সালের বিশ্বকাপেও। সবশেষ আর্জেন্টাইন ক্লাব জিমনেসিয়ার কোচের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।
দারুণ ফুটবলে যেমন নন্দিত ছিলেন, তেমনটি নিন্দিতও ছিলেন বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে। বিশেষ করে, কোকেন সেবন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার ফুটবল ক্যারিয়ারে। যে কারণে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে খেলাই হয়নি এই কিংবদন্তির। ১৯৯১ সালে ড্রাগ পজিটিভ হয়ে ১৫ মাস নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি।
তবে ম্যারাডোনাকে বিশ্ব মনে রাখবে তার অসম্ভব সুন্দর ফুটবল কারুকার্যের জন্য। মাঠের সবুজ গালিচায় তার পায়ের তুলিতে আঁকা অসংখ্য মুহুর্ত ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতির পাতায় সাঁজানো থাকবে চিরকাল।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।