Friday, 23rd May, 2025

বাঙালি সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘কাচারি ঘর’

বাঙালি সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘কাচারি ঘর’
ভেদরগঞ্জ উপজেলার পাপরাইল গ্রামে মুন্সীর সামনের কাচারি ঘর। ছবি-দৈনিক হুংকার।

বাঙ্গালীর অতি পরিচিত বৈঠকখানা, বাংলা ঘর বা কাচারি ঘর যা এক সময় ছিলো গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একটি অংশ। গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ বনেদি গৃহস্থের বাড়িতে এ কাচারি ঘর দেখা যেত। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর।
বর্তমান গেস্টরুম কিংবা ড্রয়িং রুমের আদি ভার্সন ছিলো কাচারি ঘর। এখন আর গ্রামীণ জনপদে কাচারি ঘর দেখা যায় না। প্রাচীণকালে মূল বাড়ি থেকে একটু দূরে আলাদা খোলামেলা জায়গায় কাচারি ঘরের অবস্থান ছিল।
অতিথি, পথচারী কিংবা সাক্ষাৎ প্রার্থীরা এই ঘরে এসেই বসতেন। এক সময়ের মুরব্বি প্রথা ও যৌথ পরিবার প্রথার কারণে কাচারি ঘর ছিল বাংলার অবস্থাসম্পন্ন ও মধ্যবিত্ত গৃহস্থের আভিজাত্যের প্রতিক।
চারিদিকে ঢেউ টিনের বেড়া সঙ্গে কাঠের কারুকাজ করে উপরে টিন অথবা ছনের ছাউনি থাকতো কাচারি ঘরে। যা অতি প্রাকৃতিকবান্ধব পরিবেশ দিয়ে আবেষ্টিত ছিল।
তখনকার যুগে বৈদ্যুতিক পাখা না থাকলেও তীব্র গরমে কাচারি ঘরের খোলা জানালা দিয়ে হিমেল বাতাস বইতো। আলোচনা, শালিস-দরবার, গল্প-আড্ডার আসর বসতো কাচারি ঘরে। যা আজ অতিত স্মৃতি।
বর্ষা মৌসুমে গ্রামের লোকজনদের উপস্থিতিতে কাচারি ঘরে বসতো পুঁথি পাঠ ও জারি গানের আসর। পথচারীরা এই কাচারি ঘরে ক্ষণিকের জন্য বিশ্রাম নিতেন। বিপদে পড়লে রাত যাপন করতো। গৃহস্থের বাড়ির ভিতর থেকে খাবার পাঠানো হতো কাচারি ঘরের অতিথিদের জন্য কেউ কেউ এ ঘরকে মুসাফির খানাও বলতো।
আবাসিক গৃহশিক্ষকের (লজিং মাস্টার) ও আরবি শিক্ষার ব্যবস্থার জন্য কাচারি ঘরের অবদান অনস্বীকার্য। মাস্টার ও আরবি শিক্ষার হুজুরের জন্য কাচারি ঘরে থাকার ব্যবস্থা ছিল। কোন কোন বাড়ির কাচারি ঘর সকাল বেলা মক্তব হিসেবেও ব্যবহৃত হত।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।