Monday, 2nd June, 2025

পল্লী বিদ্যুৎ ‘কুইক রেসপন্স সার্ভিস’ বাস্তবায়ন সময়ের দাবী

পল্লী বিদ্যুৎ ‘কুইক রেসপন্স সার্ভিস’ বাস্তবায়ন সময়ের দাবী
নড়িয় উপজেলায় পরীক্ষা মূলক কুইক রেসপন্স সার্ভিস টিম (সংগ্রহিত ছবি)

পল্লী বিদ্যুতের কুইক রেসপন্স সার্ভিস এর বাস্তবায়ন চায় গ্রাহকরা।এ সার্ভিসটি বাস্তবায়ন হলে সেবা গ্রহিতারা যেমন উপকৃত হবে তেমনী কর্তৃপক্ষও হবে লাভবান। বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি বোর্ডে আলোচনা হলেও পরীক্ষা মুলক এখনো নড়িয়া ব্যাতিত কোন উপজেলায় এ কার্যক্রম শুরু হয়রি। তবে নড়িয় উপজেলায় এ সার্ভিসের পরীক্ষা মুলক কার্যক্রমে গ্রাহক পর্যায়ে ব্যাপক সারা ফেলেছে বলে দাবি করেছে পৌর শহরের গ্রাহক ইলিয়াছ মাহমুদ।
আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি পল্লী বিদ্যুৎ ‘কুইক রেসপন্স সার্ভিস’ বাস্তবায়ন সময়ের দাবী এর দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্বে আপনারা বিবরণ, প্রেক্ষাপট ও বাস্তবায়ন বিষয়ে জেনেছেন। আজ জানবেনঃ
ফলাফল
দ্রুত অভিযোগ সমাধানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ক্ষেত্রে গ্রাহক ঘন্টা হ্রাস পাবে এবং মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের আন্তর্জাতিক মানদন্ড ঝঅওউও (ঝুংঃবস আবৎধমব ওহঃবৎৎঁঢ়ঃরড়হ উঁৎধঃরড়হ ওহফবী), ঝঅওঋও (ঝুংঃবস আবৎধমব ওহঃবৎৎঁঢ়ঃরড়হ ঋৎবয়ঁবহপু ওহফবী) মান হ্রাস পাবে। স্পটে মিটার বা সার্ভিস ড্রপ তার পরিবর্তন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা পুন:সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহক হয়রানি হ্রাস পাবে এবং বাসায় কুইক রেসপন্স টিম গেলে গ্রাহকের প্রত্যাশা, সন্তুষ্টি অনেক বৃদ্ধি পাবে। অভিযোগের ভিত্তিতে একই স্থানে দ্বিতীয় বার যাওয়া লাগবে না বিধায় কর্মঘন্টা হ্রাস পাবে বা কাজের চাপ কমবে এবং জনবল সাশ্রয় হবে। নিজস্ব জনবল দ্বারা প্রতিদিন অফিসে (সদর দপ্তর, জোনাল, সাব-জোনাল, এরিয়া অফিস, অভিযোগ কেন্দ্র) ন্যূনতম একটি কুইক রেসপন্স টিম পরিচালনা করা সম্ভব। জরুরি রাইট অব ওয়ে কাজ, কানেক্টর লাগানো ও ক্ষুদ্র রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করলে লাইনের তাৎক্ষণিক ত্রুটি নিরসন হবে, সিস্টেম লস হ্রাস পাবে। প্রিভেন্টিভ মেইনটেন্যান্স কাজের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বাৎসরিক ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পাবে। ধীরে ধীরে গ্রাহক অভিযোগ হ্রাস পাবে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। স্মার্ট গ্রিড সিস্টেমে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার অটোমেশনের মাধ্যমে সকল উপকেন্দ্রকে স্ক্যাডা সিস্টেমের আওতায় এনে ফিডার গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এভাবে বিতরণ লাইনের ত্রুটি সহজে খুঁজে পাওয়া যায় এবং উক্ত ত্রুটি সমাধানে ‘কুইক রেসপন্স সার্ভিস’ এর গুরুত্ব আরও বাড়বে। টিম বকেয়া পল্লী বিদ্যুৎ বিল আদায়ে গ্রাহক সদস্যকে তাগাদা প্রদান, অনলাইন বা ব্যাংকে পরিশোধ নিশ্চিত করা অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ে কাজ করবে। সেবা পদ্ধতি সহজিকরণ কার্যক্রম হিসেবে ইতোমধ্যে ‘কুইক রেসপন্স সার্ভিস’ এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে, এক্ষেত্রে গ্রাহক সদস্যের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর অসংখ্য গ্রাহক সদস্যের সার্ভিস ড্রপ তার নষ্ট হওয়া, মিটার ভাঙ্গা বা পুড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তথা স্মার্ট পল্লী বিদ্যুৎ সেবা হিসেবে ‘ছঁরপশ জবংঢ়ড়হংব ঝবৎারপব’ একটি সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত, কার্যকরী সমাধান। সর্বোপরি গ্রাহক সদস্যের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দ্রুত পল্লী বিদ্যুৎ সেবা প্রদানের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য, মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা হিসেবে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। ইহা মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থা পর্যায়ের অফিসের জন্য ই-গভর্ন্যান্স ও ইনোভেশন কার্যক্রমের অংশ। –
কুইক রেসপন্স সার্ভিস এর সুবিধাসমূহ
(১) গ্রাহক হয়রানি হ্রাস : অভিযোগ মোতাবেক গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে, গ্রাহকের অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির সাথে বিদ্যুতের পুন:সংযোগ প্রদান করাই পল্লী বিদ্যুৎ কুইক রেসপন্স সার্ভিসের প্রধান কাজ। গ্রাহকের বিদ্যুতের মিটার, সার্ভিস ড্রপ তার নষ্ট হলে অভিযোগ সমাধান গ্রুপ মিটার, তার খুলে নিয়ে আসে। তখন গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে, প্রচলিত নিয়মে অফিস টাইমের পর বিদ্যুৎ পুন:সংযোগ দেয়ার কোন ব্যবস্থা করা হয় না। সিএমও ছাড়া মিটার রুম থেকে মিটার ইস্যু হয় না। প্রাপ্ত অভিযোগ সমাধানের ক্ষেত্রে স্পটে মিটার, তার পরিবর্তন করলে গ্রাহক নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবে। আবাসিক, বানিজ্যিক, সেচ, শিল্প, দাতব্যসহ সকল শ্রেণির গ্রাহক সুবিধা পাবেন। সিএমও (ঈড়হংঁসবৎ গবঃবৎ ঙৎফবৎ) ছাড়া মিটার লাগানো সিদ্ধান্তের ব্যাপার, এজন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন।
(২) মিটার ও তারের মূল্য : পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমে গ্রাহকের নতুন সংযোগের মিটার বা সার্ভিস ড্রপ তারের মূল্য নেয়া হয় না। বিদ্যমান বিদ্যুতের মিটার, তার প্রাকৃতিক কারণে, যেকোন ব্যক্তি হস্তক্ষেপে নষ্ট হতে পারে। প্রাকৃতিক কারণে নষ্ট হলে মিটার বা/এবং সার্ভিস ড্রপ তারের মূল্য এবং ডিসি আরসি ফি নেয়া হয় না। ব্যক্তি হস্তক্ষেপে নষ্ট হলে মিটার বা/এবং সার্ভিস ড্রপ তারের মূল্য এবং ডিসি আরসি ফি নেয়া হয়। শুরুর দিকে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণে মিটার বা সার্ভিস ড্রপ তার নষ্ট হলে কুইক রেসপন্স সার্ভিস প্রয়োগ করা যেতে পারে। পরবর্তীতে গ্রাহক সদস্যের সর্বশেষ মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ থাকলে উভয় ক্ষেত্রে কুইক রেসপন্স সার্ভিস প্রয়োগ করা যাবে। কিছু ব্যতিক্রম ঘটনায় সেবাটি নাও দেয়া যেতে পারে বা উক্ত বিষয়ে গ্রাহক সদস্যের লিখিত অঙ্গীকারনামা নিয়ে কুইক রেসপন্স সার্ভিসটি দেয়া যেতে পারে।
(৩) জনবল, জ্বালানি সাশ্রয় : অভিযোগের ভিত্তিতে একই স্থানে দ্বিতীয় বার যাওয়া লাগবে না বিধায় কর্মঘণ্টা হ্রাস পাবে বা লাইনম্যানের কাজের চাপ কমবে ও জনবল সাশ্রয় হবে। পুন:সংযোগ সিএমও বা জবপড়হহবপঃরড়হ ঈগঙ এর কাজ কমবে অর্থাৎ স্পটেই কাজটি সমাধান হবে। অভিযোগের ভিত্তিতে একই স্থানে একবার গিয়েই অভিযোগটি সমাধান করলে জ্বালানি তেল ব্যবহার সাশ্রয় ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। পল্লী বিদ্যুৎ ‘কুইক রেসপন্স সার্ভিস’ উদ্ভাবনী ধারণার বাস্তবায়নের ফলে গ্রাহক ২৪/৭ সেবায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবে। গ্রাহকের দেয়া অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি, বিশেষ করে অফিস টাইম পরবর্তী বা বন্ধের দিনে মিটার, সার্ভিস ড্রপ তার বা অন্যান্য মালামাল নষ্ট হলে স্পটে মিটার, সার্ভিস ড্রপ তার বা অন্যান্য মালামাল প্রতিস্থাপন করা যাবে এবং সারাদেশে মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
(৪) সেবা খাতের দুর্নীতি হ্রাস : পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমে প্রতিদিন অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স (ওএন্ডএম) বিভাগের অভিযোগ সমাধান গ্রুপের লাইনম্যানগণ বিদ্যুতের মিটার নষ্ট হলে গ্রাহক প্রান্ত হতে মিটার খুলে অফিসে নিয়ে আসে। মিটার রিপোর্টে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (ওএন্ডএম) মতামত দেয় এবং এজিএম (ওএন্ডএম) বিলিং শাখায় সিএমও করতে এজিএম (অর্থ-রাজস্ব) বা বিএস (অর্থ-রাজস্ব) কাছে প্রেরণ করে। যেহেতু কার্যক্রমটি অফিসে প্রতিদিনের স্বাভাবিক প্রাকটিস ও কুইক রেসপন্স সার্ভিস চালু করলে লাইনম্যান দুর্নীতিগ্রস্থ হবে একথা কোনভাবে সঠিক নয়। উক্ত গ্রাহক সদস্যের চলমান মোবাইল নম্বরটি বাধ্যতামূলকভাবে কুইক রেসপন্স সার্ভিস ফরমে লিখতে হবে। তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে গ্রাহকগণ সরাসরি অফিসে এসে সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবে ও গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, ফলে সেবা খাতের দুর্নীতি হ্রাস পাবে। (উদ্ভাবনী ধারণার প্রবক্তা. আশীষ কুমার রায়,এজিএম (ওএন্ডএম) ভেদরগঞ্জ সাব জোনাল অফিস,ভেদরগঞ্জ,শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি)। চলবে—–। ধারাবাহিক প্রতিবেদন, পর্ব-২)

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।