
“মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে মধুর নাম ত্রিভূবনে নাই।” কবি কাজী কাদের নেওয়াজ তার অমর কবিতায
বহুল ব্যবহৃত কবিতার অত্যন্ত সুন্দর এবং বাস্তবিক অর্থে চিরন্তন সত্য মায়ের মমতাময়ী রূপ তুলে ধরেছেন। নশ্বর এই পৃথিবীতে আমাদের সবচেয়ে আপন ও কাছের মানুষ হচ্ছে মা। যত কষ্টই থাকুক না কেন, মায়ের কথা মনে হলে নিজের অজান্তেই যেন ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। যে মানুষটি সকল বিপদে আমাদের পাশে ছায়ার মত থাকেন তিনি আর কেউ নন, আমাদের সকলের প্রিয় মহীয়সী মা জননী।
আর তাই পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালিত হয় বিশ্ব মা দিবস। মাকে শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা জানানোর রীতি এক এক দেশে বা সমাজে এক এক রকম। আজকের এদিনে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি দৈনিক হুংকার পরিবারের বিনম্র সালাম ও শ্রদ্ধা।
সবচেয়ে পবিত্র ও মধুর শব্দের নাম ‘মা’। মায়ের ভালোবাসা পেতে প্রয়োজন হয় না ভালোবাসি বলা। সুখে-দুঃখে প্রতিটি সময় মায়া স্নেহ ভালোবাসায় যিনি জড়িয়ে রাখেন, তিনিই মা। বিশ্ব মা দিবস আজ। যদিও মাকে ভালোবাসা-শ্রদ্ধা জানানোর কোন দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না- তবুও মাকে গভীর মমতায় স্মরণ করার দিন আজ।
প্রাচীন গ্রিসে বিশ্ব মা দিবসের পালন করা হলেও আধুনিককালে এর প্রবর্তন করেন এক মার্কিন নারী। ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিস নামের নারী মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।
১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে। যদিও করোনার কারণে এবার দিবসটিতে কোন আনুষ্ঠানিকতা দেখা যাবেনা। তাই বলে ঘরে ঘরে মায়ের ভালবাসা কুড়াতে কার্পণ্য করবে না, কোন সুসন্তান।
জগতে মায়ের মতো এমন আপনজন আর কে আছে! তাই প্রতি বছর এই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় প্রিয় মায়ের মর্যাদার কথা।
কবি কামিনী রায় তার ‘কত ভালবাসি মা’ কবিতায় মাকে বন্দনা করে লিখেছেন-
জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-
মা, তোমারে কত ভালোবাসি!
‘কত ভালোবাস ধন?’ জননী শুধায়।
এ-ত বলি দুই হাত প্রসারিত দেখায়।
তুমি মা আমারে ভালোবাস কতখানি?
মা বলেন ‘মাপ তার আমি নাহি জানি।’
‘তবু কতখানি, বল।’
‘যতখানি ধরে
তোমার মায়ের বুকে।’
আসলে ‘মা’ পৃথিবীর বিশুদ্ধতম শব্দ। আর বিশুদ্ধতম ভালোবাসা, মায়ের ভালোবাসা।
পল্লী কবি জসিমউদদীন মায়ে যে রূপ তুলে ধরেছেন,পল্লী জননী কবিতায়,”পান্ডুর গালে চুমো খায় মাতা, সারা গায়ে দেয় হাত,পারে যদি বুকে যত স্নেহ আছে ঢেলে দেয় তারি সাথ।
নামাজের ঘরে মোমবাতি মানে, দরগায় মানে দান,ছেলেরে তাহার ভাল কোরে দাও, কাঁদে জননীর প্রাণ।ভাল করে দাও আল্লা রছুল। ভাল কোরে দাও পীর।কহিতে কহিতে মুখখানি ভাসে বহিয়া নয়ন নীর। প্রেম ও দ্রোহের কাব্য রচয়িতা বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম মাকে নিয়ে লিখেন,
যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত।
যখন জনন নিনু
কত অসহায় ছিনু,
কাঁদা ছাড়া নাহি জানতাম কোন কিছু,
ওঠা বসা দূরে থাক-
মুখে নাহি ছিল বাক,
চাহনি ফিরিত শুধু মা’র পিছু পিছু!
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ কৈশরে মাকে হারান,তাই তার রচনায় মা বা জননীর উল্লেখ করেছে তাতে সেই মা হলেন দেশ জননী, জগজ্জননী অথবা নিজের সৃষ্ট চরিত্রের মা।
লিখেছেন: আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিব, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক হুংকার
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।