
মঙ্গলবার পদ্মা নদীর শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপরে। এ কারণে জেলার জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়ার নিন্মাঞ্চলের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্ধী হয়ে পরেছে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ১৩ আগস্ট থেকে পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর পর প্রতিদিনই পদ্মায় পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়েছে। পানি বেড়ে নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও জাজিরা উপজেলার ৩০টি গ্রামপ্লাবিত হয়েছে। জাজিরার নাওডোবা, পূর্বনাওডোবা, পালেরচর, কুন্ডেরচর, নড়িয়ার চরআত্রা, মোক্তারেরচর, নওপাড়া, ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা, তারাবুনিয়া ও চরসেনসাস ইউনিয়নের গ্রামগুলোর অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পরেছে। তাদের অনেকের ঘরে পানি উঠে বিপাকে পরেছেন। গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় খাদ্য পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার জাজিরার পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে পানি উঠেছে। নৌকা ছাড়া তারা চালাচল করতে পারছেন না। কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পরেছেন। পানির নলকুপ তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
জাজিরার মাঝিকান্দি গ্রামের আলী মাল (৫৫) কৃষি শ্রমিক। তাদের বাড়িতে তিনটি ঘরে পানি উঠেছে। ঘরে বসবাস করতে না পেরে পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে বাড়ির উঠানে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় (ট্রলার) আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ১০ দিন যাবৎ বাড়ির উঠানে পানি। চার দিন যাবৎ ঘরে পানি উঠেছে। বাধ্য হয়ে ট্রলারে আশ্রয় নিয়েছি। বৃষ্টি হলে সীমাহিন দুর্ভোগে পরতে হচ্ছে। খাওয়ার কষ্ট, টয়লেট করতে কষ্ট হচ্ছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে পরেছি।
জাজিরার পাইন পাড়া এলাকার বাসিন্দা মিরাজ মাঝি বলেন, বাড়ির চার দিকে পানি। ঘর থেকে বের হতে পারিনা। কাজ নেই, খাবার যা আছে দুই-চারদিন চলবে। এর পরই খাদ্য সংকটে পরব।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তি গ্রামে পানি উঠেছে। পানিবন্ধী মানুষদের সহায়তা করার জন্য ৮০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৭০ মেট্রিক টন চাল, তিন লাখ টাকা ও ১০০ বান্ডিল টিন বরাদ্দ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান সোমবার জাজিরার কুন্ডেরচর এলাকায় ১৪২ পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল ও দুই হাজার করে টাকা সহায়তা দিয়েছেন। পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম এনামুল হক শামীম নড়িয়ায় পানিবন্ধী ২০০ পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, জারিরার পাঁচটি ইউনিয়নের তীরবর্তি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আল নাসীফ বলেন, বর্ষার পানি বৃদ্ধির সংবাদ পেয়ে উপজেলা দূর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা, কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের উপজেলার কম বেশী প্রায় ৩৫টি গ্রাম নিমজ্জিত হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। তাদের সহায়তা করার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। পদ্মার তীরবর্তি যে সকল গ্রামের মানুষ পানিবন্ধী ও ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদের সহায়তা করা হচ্ছে। কোন মানুষ খাদ্য কষ্টে ও আশ্রয়হীন থাকবেন না। জেলায় ৪৫টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র রয়েছে। পানি আরো বৃদ্ধি পেলে সেখানে মানুষদের নেয়া হবে।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।