
খনার বচন “যদি বর্ষে আঘনে, সোনা ফলে বাগনে” দুইদিনের বৃষ্টির পরে শনিবারের সোনালী রোদের উজ্জল হাঁসি সেই বার্তাই বহন করছে।
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে দেশের মধ্যাঞ্চলিয় জেলা শরীয়তপুরে দুইদিনে মুষলধারে বৃষ্টি মশলা জাতীয় ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে আশংকা থাকলেও পানি নেমে গেলে কৃষকের ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশী হবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। শরীয়তপুরে এ বছর পিঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, সরিষা, কালোজিরাসহ, মশলা জাতীয় রবিশস্যের জমি অধিকাংশই পানিতে ডুবেছে। জেলা ও জাজিরা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, এ বছর মশলা জাতীয় ফসলের চাষ হয়েছিল ২ হাজার ৩৩৭ হেক্টর জমিতে। আমন ধান চাষ হয়েছিল ১৪ হাজার ২৩৭ হেক্টর জমিতে।
মশলা জাতীয় শস্য বেশিদিন পানির নিচে থাকলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অশংকা রয়েছে। তবে বৃষ্টি কমে যাওয়ার পরে চাষীরা পানি নিস্কাশনের জন্য মাঠে নেমে পরায় ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশী হবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে শরীয়তপুরের আমন ধানসহ মশলা জাতীয় রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তবে বৃষ্টির থেমে যাওয়ায় পানি দ্রুত নিস্কাসন করা গেলে ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হবে না। মশলা জাতীয় রবিশস্যের বীজ ও চারা সাধারণত চার দিন থেকে এক সপ্তাহ পানির নিচে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জেলার নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর অঞ্চলের কৃষকরা জানান, ঘুর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা জুড়ে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিতে পাকা আমন ধানসহ মশলা জাতীয় রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, সরিষা, কালোজিরা, মরিচসহ অন্যান্য ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পিঁয়াজ ও রসুন চাষীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিঁয়াজ, রসুনের বীজ থেকে মাটি ফুঁড়ে চারা গজাতে দেখা গেছে মাত্র এক সপ্তাহ আগে থেকে। মিধিলির প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টির জমাট বাঁধা পানিতে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। বৃষ্টি এত বেশি হয়েছে যে, ফসলের চাঁরা মাটি থেকে উপড়ে গিয়ে পানিতে ভেসে এক জায়গায় একত্রিত হয়ে গেছে। ঋণ করে এসব ফসল চাষ করা কৃষকদের পথে বসতে হবে এখন।
সেনেরচর ইউনিয়নের কৃষক হাকিম মিয়া বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বেশি লাভের আশায় পিঁয়াজ ও রসুন চাষ করেছিলাম। তিন চারদিন আগে চারা গজিয়েছে আমার জমিতে। সেই চারাগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। ভেসেও গেছে অনেকটা। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আমাকে পথে বসিয়ে দিয়ে গেল।
নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের কৃষক বাবুল মাদবর বলেন, হঠাৎ করেই বৃষ্টি নামায় আমার চাষ করা কালোজিরা, ধনিয়া ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। মিধিলি নামে নাকি ঘুর্ণিঝড় এসেছে। সেই ঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হয়ে আমার জমি এখন পানির নিচে। বৃষ্টি শেষ হলে আমাকে আবার নতুন করে বীজ রোপন করতে হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা উপসহকারি কৃষি অফিসার মামুনুর রশিদ হাসিব বলেন, বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় আমরা কৃষকদের পরামশ্য দিয়ে মাঠে পানি সরানোর জন্য কাজে লাগিয়ে দিয়েছি। আসা করি আল্লাহর রহমতে ফসলের ক্ষতি হবেনা।
শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, শরীয়তপুরে দুইদিন ধরে ঘুর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি গুলো ফসলের মাঠ থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। আমন ধান বেশিরভাগ কৃষকরা ঘরে তুলেছে। কিছু অংশ বাকি রয়েছে। বৃষ্টিতে মশলা জাতীয় ফসলগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে আর বৃষ্টি না হলে ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশী হবে।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।