
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার সিলগালা বাসভবন থেকে জানালার গ্রিল কেটে জব্দকৃত ১৩ বস্তা সরকারি চাল ও সরকারি সিলকৃত ১১শ চালের বস্তা গায়েবের সময় খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) ইকবাল মাহমুদকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন। রোববার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদাম বাউন্ডারির ভেতর সিলগালাকৃত সরকারি বাসভবন থেকে জানালার গ্রিল কেটে জব্দকৃত আলামত সরানোর সময় তাঁকে ধরা হয়। ভেদরগঞ্জ ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (১১ নভেম্বর) সকালে উপজেলা খাদ্যগুদাম বাউন্ডারির মধ্যে অবস্থিত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) ইকবাল মাহমুদের সরকারি বাসভবনে অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন। অভিযানকালে ওই বাসভবন থেকে ১৩ বস্তা (৫৯০ কেজি) সরকারি চাল ও সরকারি সিলযুক্ত ১ হাজার ১০০ খালি বস্তা জব্দ করে। এরপর আলামতগুলো সেখানেই রেখে ভবনটি সিলগালা করে দরজায় নোটিশ লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন ইউএনও। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককেও বিষয়টি জানানো হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, অপরিচিত নম্বর থেকে ফোনকলের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানতে পারেন, সিলগালা করা ভবনের গ্রিল কেটে জব্দকৃত আলামত গায়েব করা হচ্ছে। সংবাদ পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সঙ্গে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা দেখতে পান, ভবনের জানালার গ্রিল কেটে আলামত সরানো হচ্ছে। এ সময় খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ ও গ্রিল কাটায় নিযুক্ত ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরেন তাঁরা। এর ফাঁকে নিরাপত্তা প্রহরী আবু হানিফ পালিয়ে যান। পরে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোশারফ হোসেনকে ডেকে এনে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ভেদরগঞ্জ বাজারের ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কর্মচারী সজিব ছৈয়ালকে ভাড়া করে এনে জানালার চারটি রড মেশিন দিয়ে কাটা হয়। খাদ্য গুদামের নৈশপ্রহরী আবু হানিফ ভেতরে প্রবেশ করে প্লাস্টিক ও পাটের খালি বস্তাসহ বেশ কিছু সুতা সরিয়ে ফেলেন। কিন্তু চালের বস্তা সরানোর আগেই ইউএনও ঘটনাস্থলে হাজির হন।
ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সত্ত্বাধিকারী বিল্লাল হাওলাদার বলেন, ‘খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ আমাকে বলেছিলেন, তালুকদার বাড়ির একটি বাড়ির গ্রিল কাটতে হবে। কথা অনুযায়ী আমার কর্মচারী সজিবকে পাঠানো হয়। পরে জানতে পারি, সজিবকে দিয়ে তিনি খাদ্য গুদামের বাসভবনের গ্রিল কেটেছেন।
সজিব ছৈয়াল বলেন, ‘মহাজন আমাকে ইকবাল মাহমুদের সাথে যেতে বলেছিল। তার কথামতো খাদ্যগুদামের বাসভবনের জানালার গ্রিল কেটে দিয়েছি। কাটার পর একজন কিছু খালি বস্তা ও সুতা সরিয়ে ফেলেছে। কথা ছিল চালের বস্তাগুলো সরানোর পরে জানালার গ্রিলটি আবার জোড়া লাগিয়ে দেব। কিন্তু এর আগেই ইউএনও স্যার চলে এসেছেন।’
ঘটনার বর্ননা দিয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সিলগালাকৃত বাসভবনের গ্রিল কেটে জব্দকৃত আলামত গায়েব করে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ আমাদের হেয় প্রতিপন্ন ও আমাদের কার্যক্রম মিথ্যা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। এটা ফৌজদারি অপরাধ। তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়নি। আমরা তাঁকে হাতেনাতে ধরেছি। তাঁকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কাছে সোপর্দ করেছি। আমরা আলামত আবার সংরক্ষণ করেছি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ঢাকা থেকে আসলে আমরা তাঁদের এখানে নিয়ে আসব। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানানো হবে। দুদক আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।