
অবৈধ সম্পককে বৈধ করতে গিয়ে জনসন্মুখে ফাঁস হয়ে গেল দুই শিক্ষকের দীর্ঘদিনের পাপকান্ড। জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের এহেন কান্ডে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানিয়েছেন ২২ জুলাই দিবাগত রাতে প্রধান শিক্ষক আজহারুল তার খালি বাড়িতে ডেকে আনে শিক্ষিকা খাদিজাকে। কারণ তার প্রথম স্ত্রীর অনপোস্থিতিতে বিবাহ রেজিস্টেশন করার জন্য কাজি ডাকা হয়েছিল বলে শুনেছি। পরে রাত ৪টা পর্যন্ত তার প্রথম স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনের প্রভাবে বিয়ে রেজিস্টেশন না হওয়ায় আজহারুল ও খাদিজার বৈধভাবে ঘর বাঁধার স্বপ্ন ম্লান হয়ে যায়। এ ঘটনায় সহকারী শিক্ষিকা বাদী হয়ে (২৩ জুলাই) স্থায়ী সমাধান চেয়ে সখিপুর থানায় একটি অভিযোগ করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, এই দুই শিক্ষককে ইতিপূর্বেও কয়েক বার আপত্তিকর অবস্থায় হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল। তবু তাদের রঙ্গলীলা বন্ধ হয়নি। প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ও টাকার জোরে প্রতিবারই পার পেয়ে যান আজহার। এমনকি এ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে ৪৪ নং মাঝিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আজহারুল ইসলাম। এর চার বছর পর সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন খাদিজা। এরপর থেকে সহকারী শিক্ষিকার সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষক আজহারুল ইসলাম।
উপজেলার ৮০ নং চরসেনসাস মাঝের চর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ৩১ মে ২০০৯ সাল থেকে ৩০ মার্চ ২০১৩ সাল পযর্ন্ত ৪৪ নং মাঝিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকার সুবাদে স্কুলের পাশেই চরসেনসাস এলাকায় এক ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। পরে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্ক হওয়ার পর শিক্ষিকার স্বামী বাসায় না থাকলে তার বাসায় যেতেন আজহারুল। শিক্ষিকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার দৈহিক সম্পর্কও করেছেন। বিষয়টি শিক্ষিকার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন যেনে যায় এবং ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ খাদিজার স্বামীকে তালাক দেয়া শর্তে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন আজহারুল। পরে স্বামীকে তালাক দেন ওই শিক্ষকা। কিন্তু আজহারুল তাকে বিয়ে করবে বলে সময় নিয়ে তালবাহানা করছেন। ২২ জুলাই বৃহস্পতিবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে তার প্রথম স্ত্রী তিন সন্তানসহ শশুর বাড়ী বেড়াতে যায়। এই সুযোগ সদব্যবহার করে তারা বিয়ে করবে বলে আজহারুল খাদিজাকে তার নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে আসেন। স্থানীয় লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে। পরে আজহারুলের প্রথম স্ত্রী ও তার প্রভাবশালী আত্মীস্বজন কাবিন রেজিষ্টেশন না করে পরে দেখা যাবে বলে শিক্ষিকাকে জোড়পূর্বক তার বাড়ি পৌঁছে দেয়। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে সখিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষিকা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষ মেম্বার কালন মিয়া বলেন, আজহারুল মাস্টারের বউ বাড়ীতে না থাকায় খাদিজা ম্যাডামকে ঘরে নিয়ে আসে। পরে সংবাদ পেয়ে রাতে এলাকাবাসি তাদের আটক করে। তাদের প্রভাবশালী আত্মীয় স্বজনের কারণে কাজী আসার পরেও নাকি কাবিন হয়নি।
এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক আজহারুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার জানান, আমার স্বামীকে আমি আগে অনেক বার বলেছি যে ঐ মহিলার কাছ থেকে দুরে থাকতে। কিছুতেই শুনেনি আমার কথা। বৃহস্পতিবার আমি আমার বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম, পুরো বাড়ি ঘর ফাঁকা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে খাদিজা আমার ঘরে আসে। পরে প্রতিবেশীরা আমাকে খবর দিলে আমি তাৎক্ষনিক চলে আসি। আমার এ বিষয় কিছু বলার ভাষা নাই।
১১৪ নং প্রগতি বিদ্যা নিকেতন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষকের নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি এলাকার সবাই অবগত। গত ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি ৮০ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চিনু বেগমের সাথে বিদ্যালয়ের কক্ষে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলে স্থানীয়রা দেখে ফেলেন। পরে তাদের অবরুদ্ধ করলে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও সখিপুর থানার ওসির নেতৃত্বে বিচারে আজহারুলকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে এবং চিনু বেগমকে মানিকগঞ্জ জেলায় বদলি করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষিকা বলেন, আজহারুলের জন্য আমার প্রথম স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া করেছি। তার কারণে স্বামীকে তালাক দিয়েছি। তিনি বিয়ে করবেন বলে সময় নিয়ে এখন তালবাহানা করছেন। গতকাল রাতে আমাকে বিয়ে করবে বলে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে আমার সঙ্গে রাত কাটাইছে এখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই এর সমাধান চেয়ে সখিপুর থানায় একটি অভিযোগ করেছি।
প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি মিমাংশার চেষ্টা চলছে। থানায় অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ও যা চায় তাই দিয়ে মিমাংশা করা হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুলতানা রাজিয়া বলেন, এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আজহারুলের মোবাইলে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার তোফায়েলকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির করা হয়েছে। তারা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, খাদিজা নামের এক শিক্ষিকা একটি লিখিত অভিযোগ করেছে। সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আল নাসীফ বলেন, ওই শিক্ষিকা আমার কাছে ফোন দিয়েছিল। আমি বিষয়টি জেনেছি। শুনেছি ওনি সখিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ প্রমানিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।