Saturday, 28th June, 2025

উন্নয়নের জন্যই ভোট বিপ্লবে বিজয়ী এনামুল হক শামীম

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর চেয়ে ৭৫ হাজার ৫৭৪ ভোট বেশী পেয়ে বেসরকারী ভাবে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতিকের প্রার্থী একেএম এনামুল হক শামীম।

রোববার (৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ তার কার্যালয়ে এ ফলাফল ঘোষণা করেন।

এনামুল হক শামীম ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ঈগল প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮২৭ ভোট।

আসনটিতে ১৩৩টি কেন্দ্রে মোট ৫১.২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোট শেষ হয় বিকেল ৪ টায়। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮১ হাজার ২৮৭ জন।

এ কে এম এনামুল হক শামীম ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদে প্রথম বার নির্বাচিত হন। সেই সাথে প্রথম বারেই সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি মন্ত্রীত্ব লাভের পরপরই নড়িয়া-সখিপুরবাসীর দুঃখ পদ্মার ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প গ্রহণ করেন। এ আসনের পদ্মা নদী পাড়ের মানুষের আতংক দুর করেছেন। তার বদৌলতে পদ্মার তীর এখন পর্যটন স্থান। কান্নার পরিবর্তে এ এলাকার মানুষ খুঁজে পেয়েছে বেঁচে থাকার নতুন ঠিকানা। মেঘনা নদীতে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সেতু নির্মাণে এগিয়ে গেছেন বহুদূর। স্বাস্থ্য, শিক্ষা অবকাঠামো, ব্রীজ কালভাট ও সড়ক যোগাযোগে করেছেন ব্যাপক উন্নয়ন।

শরীয়তপুর-২ আসনে বিগত সময়ে বেশ কয়েকজন ছিলেন সংসদ সদস্যের দায়িত্বে। চাহিদামাফিক উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি এ অঞ্চলে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মত এ কে এম এনামুল হক শামীম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি পানি সম্পদ উপমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। নড়িয়া-সখিপুরসহ সমগ্র শরীয়তপুরকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষাকল্পে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন। নড়িয়া-সখিপুরে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে চরআত্রা, নওপাড়া, কাঁচিকাটা, কুন্ডেরচর ও উত্তর তারাবুনিয়ায় বিদ্যুৎ প্রদান। নড়িয়া-সখিপুরে বিদ্যুতের জোনাল অফিস স্থাপন এবং সাবস্টেশন গুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নতুন সাবস্টেশনের অনুমোদন। প্রত্যেকটি আবেদনকৃত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিওভুক্তকরণ। ১৫টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ভবন ও দেয়াল নির্মাণ। নড়িয়া সরকারি কলেজ ও হাজী শরীয়ত উল্লাহ কলেজসহ সকল কলেজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিকরণ এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন। নড়িয়া ও সখিপুরে সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো মেরামত ও বর্ধিতকরণ। নড়িয়া ও সখিপুরে প্রায় ৫০০০ গভীর নলকূপ প্রদান। নড়িয়ায় নতুন হাসপাতাল অনুমোদন এবং ফুলফৎগঞ্জ হাসপাতাল আধুনিকরণ ও তারাবুনিয়ায় ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল চালু। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-ডিভিশন, নড়িয়াতে পানি ভবন ও চরআত্রায় হাজী আ. জলিল মুন্সি ডাকবাংলো নির্মাণ এবং নড়িয়া ও সখিপুরে আরও ২টি ডাকবাংলো নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। নড়িয়া পৌরসভাকে ‘ক’ শ্রেণিতে রূপান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন ও পৌরসভাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্ন্তভূক্তকরণ, যার মাধ্যমে এ বছরই ৫০ কোটি টাকার কাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ১১০ জনকে ৩৫ লক্ষ টাকা ও মন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২০০ জনকে ২০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান। নড়িয়া ও সখিপুরের বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার আলেম-ওলামা ও হাফেজদের প্রায় ৫০০০ পবিত্র কোরআন শরীফ উপহার প্রদান। জয় বাংলা এভিনিউ স্থাপনের মাধ্যমে নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকাকে পর্যটন এরিয়াতে রূপান্তর।

তারই ফল এলাকাবাসী তাকে নৌকায় ভোট দিয়েছে। এলাকাবাসী মনে করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে তাদের কান্ডারি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে শামীম কে দ্বিতীয় বার তুলে দিয়েছেন।

স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এনামুল হক শামীম। তিনি ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু)র ভিপি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।

উপমন্ত্রী শামীম ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ এর সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শামীম শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন, দেশে শিক্ষার প্রসারেও রয়েছে তার অগ্রণী ভূমিকা। তিনি পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম এর প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য। তিনি শরীয়তপুর চরভাগা বঙ্গবন্ধু আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, হাজী শরীয়ত উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব, নড়িয়ার রাজনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তিনি অসংখ্য সামাজিক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি দীর্ঘদিন ন্যাশনাল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে তিনি সৌদি আবর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও ভারত সফর করেন। এছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীনসহ বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন।

এনামুল হক শামীম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। তার নির্বাচনী এলাকা নড়িয়া-সখিপুরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করায় জনগণ তাকে নড়িয়া-সখিপুরের উন্নয়নের রূপকার বলে আখ্যা দিয়েছেন।

উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী আবুল হাসেম মিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মা প্রয়াত বেগম আশ্রাফুন্নেছা রত্নগর্ভা মা খেতাব প্রাপ্ত। তার মেজো ভাই বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।