মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Notice: Undefined index: top-menu-onoff-sm in /home/hongkar/public_html/wp-content/themes/newsuncode/lib/part/top-part.php on line 67

ধানুকা মনসাবাড়ি মন্দিরের পুকুর দখলের চেষ্টা

ধানুকা মনসাবাড়ি মন্দিরের এই পুকুরটি বালু দিয়ে ভরাট করে দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। ছবি-দৈনিক হুংকার।

শরীয়তপুর জেলা শহরের ধানুকা এলাকার একটি মন্দিরের পুকুর বালু দিয়ে ভরাট করে দখলচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ধানুকা এলাকার আবদুল লতিফ ঢালী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ উঠেছে। ধানুকা মনসাবাড়ি মন্দির কমিটি পুকুরের দখল ঠেকানোর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে।
জেলা প্রশাসন ও ধানুকা মনসাবাড়ি মন্দির সূত্র জানায়, ৫ শতাধিক বছর আগে ধানুকায় ১৫ একর জমির ওপর জমিদার ময়ূর ভট্টের বাড়ি গড়ে তোলা হয়। ওই বাড়িতে মনসামন্দির, কালীমন্দির, দুর্গামন্দির, টোলঘর ও পাঠশালার অবকাঠামো রয়েছে।
কালের পরিক্রমায় ময়ূর ভট্টের বাড়ির অধিকাংশ জমি মানুষের দখলে চলে গেছে। ময়ূর ভট্টের বংশের শ্যামাচর চক্রবর্তী মন্দিরগুলোসহ বাড়িটির কিছু অংশ আগলে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। গত জানুয়ারি মাসে তিনি মারা যান। বর্তমানে ময়ূর ভট্টের বাড়িটি ধানুকা মনসাবাড়ি নামে পরিচিত।
ধানুকা মনসাবাড়ি মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে সরবরাহ করা জমির কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ওই বাড়ির ৮০ নম্বর ধানুকা মৌজার আরএস ও এসএ ১০৭৬ নম্বর দাগের ৮৯ শতাংশ জমির ওপর একটি পুকুর রয়েছে। আরএস ও এসএ পর্চায় ওই পুকুর ব্রহ্মোত্তর শ্যামাঠাকুরানী-গোসাইর দিঘি নামে দেবোত্তর সম্পত্তি। সর্বশেষ বিআরএস জরিপে ১১৭৭ নম্বর দাগে ওই পুকুর অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের ১/১ খতিয়ানে তালিকাভুক্ত করা হয়। ওই পুকুর মনসাবাড়ির পূজার্চনা ও বিভিন্ন প্রতিমা বির্সজনের কাজে ব্যবহার করা হতো।
ওই কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ময়ূর ভট্টের বাড়ির ওই ৮৯ শতাংশ জমির পুকুর ভরাট করে তা দখলে নেওয়ার চেষ্টার সঙ্গে জড়িত ধানুকা এলাকার বাসিন্দা আবদুল লতিফ ঢালীর বয়স জন্মসনদ অনুযায়ী ৭৫ বছর। তিনি ১৯৫৮ সালের একটি নিলাম দেখিয়ে ওই সম্পত্তি (পুকুরটি) দাবি করছেন। তাঁর জন্মসনদ অনুযায়ী তখন (১৯৫৮ সালে) বয়স ছিল ৯ বছরের একটু বেশি। একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নিলাম খরিদ করতে পারেন না। আর দেবোত্তর সম্পত্তি নিলাম দেওয়া হয় না। তিনি ওই সম্পত্তি স্থানীয় ভূমি কার্যালয়ের কর্মচারীদের সহায়তায় ২০১৫ সালে তাঁর নামে নামজারি (মিউটেশন) করে নেন। এরপর পুনরায় তিনি ২০১৭ সালে ওই একই সম্পত্তি আবার নামজারি করেন।
ধানুকা মনসাবাড়ি মন্দির কমিটির লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, লতিফ ঢালী তাঁর সহযোগী মোস্তফা কামাল ও মিন্টু ব্যাপারীকে নিয়ে আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে ওই পুকুর বালু দিয়ে ভরাট শুরু করেন। মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করার পর জেলা প্রশাসন সেখানে চার দফায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বালু ভরাটের কাজ বন্ধ করেছিল। পরে দিনের পরিবর্তে তাঁরা রাতের আঁধারে ভরাট শুরু করেন। এরপর মনসাবাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি সমীর কিশোর দে জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করেন। আর নামজারি বাতিলের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতে মামলা করেন।
গত সোমবার ওই মামলার প্রথম শুনানি হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস দুটি নামজারির কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন। ওই সম্পত্তি যাতে লতিফ ঢালী অন্য কারও নামে হস্তান্তর, আমমোক্তার ও বায়নাপত্র নিবন্ধন করতে না পারেন, তার জন্য সাবরেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর যে তিন সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ওই পুকুরের সম্পত্তি দুই দফায় নামজারি করতে সহায়তা করেছেন, তাঁদের ১০ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ধানুকা মনসাবাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি সমীর কিশোর দে বলেন, ‘মন্দিরের পূজার্চনার কাজে পুকুরটি ব্যবহার করতাম। সেই পুকুর বালু দিয়ে ভরাট করে দখলের চেষ্টা করছেন লতিফ ঢালী। তিনি ভুয়া কিছু কাগজপত্র দিয়ে এসব কাজ করেছেন।’
দেবোত্তর সম্পত্তি নামজারি করে অবৈধভাবে দখলের চেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে আবদুল লতিফ ঢালী বলেন, ‘ওই সম্পত্তি আমি নিলামে খরিদ করেছি। ওটা দেবোত্তর নয়। দুই দফায় মিউটেশন করা হয়েছে। আমার প্রয়োজনে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছিল। হিন্দুরা কেন এতে বাধা দিচ্ছেন, কেন মন্দিরের দাবি করছেন, তা বুঝতে পারছি না।’
শরীয়তপুর সদরের পালং ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মহব্বত উল্লাহ বলেন, পুকুরটি লতিফ ঢালীর দখলে ছিল। তিনি নিলামের একটি কাগজ দিয়েছিলেন। ওই সব দেখে তাঁর নামে মিউটেশন করে দেওয়া হয়েছিল। সেটা যদি ভূল হয়ে থাকে, তাহলে এখন কর্মকর্তারা তা বাতিল করতে পারবেন।
শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, ‘ধানুকা মনসাবাড়ির পুকুরটি দেবোত্তর সম্পত্তি। ওই সম্পদ নিলাম করার কোনো সুযোগ নেই। আর মিউটেশন ও জরিপে ভিপি ১/১ খতিয়ানে যাওয়ারও সুযোগ নেই। তথ্য গোপন করে অসৎ উদ্দেশ্যে এ কাজগুলো করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।