
শরীয়তপুর জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও তার সহযোগী প্রকৌশলীগণ নামে বে-নামে ঠিকাদার নিয়োগ করে নিকটাত্মীয়দের দিয়ে ভুয়া বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করাসহ দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে প্রতিবেদনে। এই পর্বে শরীয়তপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতি চিত্র-৩ প্রকাশ করতে চলছি।
দুর্নীতির সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আ. হান্নান শেখ ও তার সহকারী প্রকৌশলী জাকিয়া সুলতানা, রানা দাস ও উপ-সহকারী প্রকৌলশী আবু সায়েম রাব্বি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ঠিকাদারদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করেছেন সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ। গণমাধ্যম কর্মীদের ভয়ে দপ্তর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ উপ-সহকারী ও সহকারী প্রকৌশলীগণ। মাঝেমধ্যে রাতের আঁধারে অফিসে বসেন প্রকৌশলীরা। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেলে দপ্তর থেকে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ারও প্রমান মিলেছে।
ঠিকাদারদের লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানাগেছে, গোসাাইরহাট উপজেলার গোসাইরহাট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র পুন: নির্মাণের জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ফরিদপুরের ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিটন এন্টারপ্রাইজকে নিয়োগ করা হয়। যাহার টেন্ডার আইডি নং-৩৯৮৮৯৫ ও নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা। নির্ধারিত সময়ে সেই ভবন পুন: নির্মাণ না করে গত অর্থ বছরে ১২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করে নেয়। নিবন্ধিত ঠিকাদারদের অভিযোগের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত শুরু করলে নির্বাহী প্রকৌশলীর ভাগ্নে মুফতিকে দিয়ে সেখানে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ শুরু করেন চলতি বছরের আগস্টে। কয়েক ফুট কাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ শেষে আবার পুরাতন ভবন সংস্কার কাজ শুরু করেন। এই অনিয়মের বিষয়টি অভিযোগকারী ঠিকাদারগণ এলাকাবাসীকে অবগত করেন। এলাকাবাসীর চাপে আগস্টের শেষ সপ্তাহে তরিঘরি করে পুরাতন ভবন টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রকৌশলীগণ। এখন সেখানে ভবন ভাঙ্গার কাজ চলছে। নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য প্রকৌশলীগন সেই কাজের তদারকিও করেন।
ঠিকাদারের শ্রমিক সরদার আলাউদ্দিন জানায়, প্রথমে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ কাজ শুরু করার পরে ভবন বিক্রির টেন্ডার হয়েছে। ভবন ভাঙ্গা শেষ হলে সেখানে ভবন পুন: নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এখন সেখানে কাজ বন্ধ।
ভবন ক্রয়কারী মেম্বার সোহেল জানায়, হাসপাতালের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ ও পুরাতন ভবন সংস্কার শুরু করে মুফতি নামের এক ঠিকাদার। এর কিছুদিন পরে মাদারীপুর থেকে কয়েকজন ঠিকাদার এসে আমিসহ এলাকাবাসীদের জানায় নতুন ভবন হওয়ার জন্য সরকারি বরাদ্দ এসেছে। এলাকাবাসী মিলে ঠিকাদার মুফতির কাছে বিষয়টি জানতে চাই। পরে তরিঘরি করে গত ২৪ আগস্ট ভবন বিক্রির কার্যক্রম শেষ করেছে। ভবনটি আমি কিনেছি। শ্রমিক নিয়ে ২৭ আগস্ট থেকে ভবন ভাঙ্গার কার্যক্রম শুরু করেছি। আগামী ১ মাসের মধ্যে ভবন ভাঙ্গার কাজ শেষ করতে পারব। একাধিকবার কাজের সাইডে গিয়েও ঠিকাদার মুফতিকে পাওয়া যায় নাই। তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও কোন সাড়া পাওয়া যায় নাই। শরীয়তপুর ও মাদারীপুর অফিসে গিয়ে কর্মচারী ব্যতিত কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না। রাতের আঁধারে কোন কর্মকর্তা গোপনে অফিসে আসে তরিঘরি করে পালিয়ে যায়। কর্মচারীদের কাছে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য প্রকৌশলীদের কথা জানতে চাইলে তারাও কর্মকর্তাদের শিখিয়ে দেয়া বুলি ছাড়েন।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।