
শরীয়তপুরের জাজিরায় এক মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামী পক্ষের লোকজন বাদী ও সাক্ষিদের একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু মিথ্যা মামলা দিয়েই থেমে নেই, তারা হত্যা মামলার বাদীসহ সাক্ষিদের জীবন নাশের হুমকিও দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে হত্যা মামলার বাদী। এই বিষয়ে হত্যা মামলার বাদী আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০৭ ধারার মামলা করেছে। হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা গুলো ভিত্তিহীন দাবী করে এইসব মামলার পূন:তদন্ত ও তথ্য প্রমান পর্যালোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষিদের।
হত্যা মামলার বাদী ও স্থানীয়রা জানান, ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়নের মেছের আলী মুন্সি কান্দি গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মাদবরকে প্রতিপক্ষের লোকেরা প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পরদিন নিহতের ছেলে মোজাম্মেল হক মাদবর বাদী হয়ে স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল গোমস্তাকে প্রধান আসামীসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। দীর্ঘদিন মামলার তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (সিআইডি) ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই আদালতে মামলার অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। বর্তমানে মামলাটি শরীয়তপুর জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয়েছে। হত্যা মামলার বাদী ও অবশিষ্ট সাক্ষিদের আদালতে না যাওয়ার জন্য আসামীদের পক্ষের লোকজনের মাধ্যমে নানা ভাবে ভয়ভীতিও হুমকি প্রদর্শণ করে এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে গর্ভপাত মামলাসহ আরো ২টি ভিন্ন ভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ করেছে হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষিরা। এইসব মামলার মধ্যে চলতি বছরের ৫ মে পশ্চিম নাওডোবা তাহের মল্লিক ও মেছের আলী মুন্সি কান্দি গ্রামে একই সময় পৃথক ২টি মারামারির ঘটনা ঘটে। একটি মামলার বাদী আবুল কালাম মল্লিকের মেয়ে কাকলী বেগম ৪ মাসের এবং অপর মামলার বাদী আসলাম শেখের স্ত্রী সোনিয়া বেগম ৩ মাসের অন্তসত্ত¦া ছিল। মামামারির সময় কাকলীর বাবা কালাম মাদবরকে ও সোনিয়ার স্বামী আসলামকে রক্ষা করতে গেলে তাদেরকে প্রতিপক্ষের লোকজন এই দুই নারীকে মারধর করে। এতে তাদের গর্ভপাত হয়ে যায় বলে মামলায় উল্যেখ করা হয়। এই বিষয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক স্থানীয় নারী-পুরুষ জানিয়েছেন মারামারির সময় গর্ভপাতের কোন ঘটনা ঘটেনি। মারামারির ঘটনার ৩দিন আগেই আসলাম শেখের স্ত্রী সোনিয়া বেগমের গর্ভের সন্তান নস্ট হয়ে যায়। বিষয়টি মেডিকেল রিপোর্টেও প্রমান মিলেছে। মামলায় গর্ভপাতের বিষয়টি প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর একটি কৌশল মাত্র। এই দিকে হত্যা মামলার প্রধান আসামী ও চলতি বছরের ৫ মে মারামারি এবং গর্ভপাতের অভিযোগ এনে ৮ মে জাজিরা থানায় দায়ের করা মামলার বাদী এই সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষিদের ভয়ভীতি প্রদর্শণ করা হয়নাই বা কোন মামলায় হত্যা মামলার বাদী বা সাক্ষিদের আসামী করা হয়নি।
হত্যা মামলার বাদী মোজাম্মেল হক মাদবর বলেন, মামলা পরিচালনা না করার জন্য আমাকে ও হত্যা মামলার সাক্ষিদের গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ঘটনার সাথে জাড়িয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে আসামী পক্ষের লোকজনের মাধ্যমে। এখানেই শেষ নয় আসামী পক্ষের লোকজন আমার বাবার মতো আমাকেও হত্যা করার হুমকি দিয়ে আসছে। গত ৫ মে ২টি মারামারির ঘটনায় আমাকে যারা সহযোগীতা করে তাদেরকে এবং হত্যা মামলার সাক্ষিদের আসামী করা হয়েছে। দুটি মামলাতেই দুইজন নারীর গর্ভপাত ঘটানোর মিথ্যা আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আমি এই মামলার পূন:তদন্ত ও তথ্য প্রমান পর্যালোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী করছি।
স্থানীয় আবু বকর জানায়, গত রমজানে ইফতারের সময় পশ্চিম নাওডোবা মেছের আলী মুন্সি কান্দি গ্রামে দুইটি পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে স্থানীয় মুরব্বিরা উভয় পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এই ঘটনায় কোন নারী আহত হয়নাই বা কোন নারীর গর্ভপাত হয় নাই। তবে শুনেছি যে নারীর গর্ভপাতের ঘটনা দেখিয়ে যে মামলা করা হয়েছে সেই মারামারির ঘটনার ৩ থেকে ৪ দিন আগেই সোনিয়া নামের ওই নারীর গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছে।
গর্ভপাত ও মারামারি মামলার বাদী আসলাম শেখ বলেন, আমি কোন মিথ্যা মামলা করি নাই। আমাকে আসামীরা যখন মারধর করছিল তখন আমার স্ত্রী সোনিয়া বেগম আমাকে রক্ষা করতে গেলে আসামীরা তাকেও মারধর করে। এতে আমার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। আমি আমার মুরব্বিদের সাথে পরামর্শ না করে এর বেশী কিছু বলতে পারব না।
হত্যা মামলার প্রধান আসামী আঃ জলিল গোমস্তা এই প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে বলেন, হত্যা মামলার কোন আসামী, বাদী ও সাক্ষিদের কোন প্রকার হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে নাই। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার পক্ষের কোন লোকজনের মাধ্যমে হত্যা মামলার বাদী বা সাক্ষিদের বিরুদ্ধে কোন মামলাও করে নাই।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।