
জাজিরা উপজেলার মূলনায় পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষা করার ঘটনায় উভয় পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় অন্তত ৬ জন আহত হয়। জাজিরা থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান।
সরেজমিন পরিদর্শন করে ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, জাজিরা উপজেলার মুলনা রায়ের কান্দি গ্রামের মরহুম ওহেদ আলী শিকদারের প্রথম পক্ষে রহমান শিকদার, আ: রব শিকদার ও আ: হাই শিকদার এবং দ্বিতীয় পক্ষে আলাউদ্দিন শিকদারসহ মোট ৭ জন পুত্র সন্তান রেখে মারা যায়। পরবর্তীতে তার উভয় পক্ষের সন্তানদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও শালিসগণ বিষয়টি মীমাংসা করে জমি পরিমাপ করে সীমানা করে দেয়। সে জমিতে আলাউদ্দিন হাওলাদার গংদের ওয়ারিশরা গাছ লাগিয়ে দখলে নেয়। বিষয়টি আ: হাই শিকদারের মেয়ে সাবিনা ও তার বোনেরা মেনে নিতে পারেনি। পরে সাবিনা তার অপর বোনদের সহায়তায় সেই জমিতে সৃজিত গাছ উঠিয়ে ফেলে। এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একাধিক মামলা মোকদ্দমাও হয়েছে। গত ১ জুলাই বিকালে সাবিনার স্বামী নুর হোসেন স্থানীয় সুরুজ জামানের দোকানে যায়। সেখানে সাবিনার চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর উপস্থিত হয়ে নুর হোসেনের সাথে তর্কে জড়ায় এবং তাকে থাপ্পর দেয়। উপস্থিত লোকজন তাৎক্ষনিক বিষয়টি থামিয়ে নুর হোসেন ও জাহাঙ্গীরকে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে সাবিনার অপর চাচাতো ভাই আক্তার শিকদার মোটর সাইকেল যোগে জাজিরা যাওয়ার পথে সাবিনা আক্তারের গতিরোধ করে তার স্বামী নুর হোসেন ও দেবর-ভাসুরদের নিয়ে আক্তারের উপর হামলা চালায়। আক্তারের স্বাজনরা বিষয়টি জানতে পেরে লাঠিশোটা নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে আগাইতে থাকে। এই দেখে সাবিনা ও তার লোকজন নুর হোসেনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোঁড়াছুঁড়ির এক পর্যায়ে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলে জাজিরা থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত দোকানদার সুরুজ জামান বলেন, নুর হোসেন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাইতে ছিল। এই সময় নুর হোসেনের চাচাতো শ্যালক জাহাঙ্গীর শিকদার এসে বলে আমার চাচা ৮০ বছরের বৃদ্ধ কিভাবে নারী নির্যাতন করে? আমাদের নামে নারী নির্যাতন মামলা ছাড়া অন্যকোন মামলা দিতে পারতি। এই মামলা দিয়ে আমাদের মানসম্মান নষ্ট করলি কেন। এই বলে নুর হোসেনকে চড়-থাপ্পর মারে। দোকানে উপস্থিত অন্যান্যরা উভয়কে থামিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে শুনেছি জাজিরা যাওয়ার পথে আক্তার শিকদারকে সাবিনা ও তার স্বামী-ভাসুরেরা মিলে মারধর করেছে।
সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম শিকদারসহ স্থানীয়রা জানায়, নুর হোসেন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে। নুর হোসেন ও তার ভাইরা মিলে পুরুষ মহিলাসহ অনেকের গায়ে হাত তোলে। তাদের নামে একাধিক মামলাও আছে।
এই বিষয়ে সাবিনা জানায়, আমারা ৪ বোন। আমাদের কোন ভাই নাই। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির মধ্য থেকে তারা ১৬ শতাংশ জমি পাওনা হয়েছে বলে দাবি করে। এই বিষয়টি মীমাংসার জন্য সিরাজ সিকদার, বজলু শিকদার ও সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম শিকদারকে অনেক বলেছি। তারা বিষয়টি মীমাংসা করে নাই। পরে সেই জমিতে দেলোয়ার শিকদাররা গাছ লাগায়। আমরা সেই গাছ উঠিয়ে ফেলি। আবার পাট বোনে। এই বিষয়ে আমি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় মামলা করি। সেই মামলা উপেক্ষা করে ৮০ জন শ্রমিক নিয়ে ২০ মিনিটে পাট কেটে আনে। তার পরেও এবার আমার স্বামীকে অনেক লোকের উপস্থিতিতে দোকানে মারধর করেছে। চাচাতো ভাই আক্তার আমার বয়সে ছোট। ওর সাথে আমার রাস্তায় দেখা হয়। ওর গাড়ি থামিয়ে বলি তোর সাহসেই জাহাঙ্গীর আমার স্বামীকে মারছে। এই কথার সাথেই আক্তার আমাকে থাপ্পর মারে। আমরা দুইজনই রাস্তার পাশে পড়ে যাই। এই সংবাদ পেয়ে অনেক লোকজন এসে আমার বাড়িতে হামলা করে। আমরা প্রধান দরজা বন্ধ করে বিল্ডিং এর ছাদে চলে যাই। সেখানে ইট-পাটকেল ও ককটেল ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে আমরাও ককটেল ছুড়ি। এবং পুলিশকে ফোন করি। পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করেছে এবং দুইদিন পাহাড়া দিয়ে রেখেছে। এই বিষয়ে থানায় মামলা করেছি।
এবিষয়ে আক্তার শিকদার বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আমার চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর এর সাথে নুর হোসেন এর দ্বন্দ্বে বিষয়ে সাবিনা আমার গতিরোধ করে থাপ্পর দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে নুর হোসেন ও তার ভাইয়েরা আমাকে এলোপাথারি মারধর করে। আমি জাজিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। পরবর্তীতে আমার নামে আবার মামলা হয়। আমি এই ঘটনার ন্যায় বিচার দাবী করছি।
জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, চাচাতো ভাই-বোনদের মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও সংঘর্ষ হয়। এ বিষয়ে এক পক্ষ থানায় মামলা করেছে। দুই জন আসামী গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে। নেতৃবৃন্দ বিষয়টি সমাধান করবেন।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।