বুধবার, ৩১ মে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলকদ ১৪৪৪ হিজরি
বুধবার, ৩১ মে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
Notice: Undefined index: top-menu-onoff-sm in /home/hongkar/public_html/wp-content/themes/newsuncode/lib/part/top-part.php on line 67

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের ঝাঁকি জাল

বিলুপ্ত প্রায় ঝাঁকি জালে মাছ ধরার প্রচেষ্টা, ছবিটি (জেলা প্রশাসকের ফেইজ বুক পেইজ থেকে নেয়া) দৈনিক হুংকার।

“গোয়াল ভরা গরু ছিল, পুকুর ভরা মাছ, দিনে দিনে লোক বেড়ে করছে সর্বনাশ” প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ অবারিত সুযোগ হারিয়ে গেছে। খাল-বিল দখল ও ভরাটের কারণে মাছ ধরার সুযোগ একেবারে সংকুচিত হয়ে এসেছে। এক সময় মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরার জন্য উৎসবমুখর আয়োজন থাকলেও কালের বিবর্তনে সেটা বিলুপ্ত প্রায়। নদীতে বর্ষাকালীন মৌসুমে কিছুটা মাছ ধরার প্রবণতা থাকলেও অন্য সময়ে এর ধারেকাছেও যেতে পারেনা মানুষ। ফলে মাছ ধরার মূল উপকরণ ঝাঁকি জাল এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। এ জাল গ্রামীণ সমাজে একটি ঐতিহ্যও ছিল বটে। গ্রামীণ জনপদের মানুষের এ জাল ফেলার শখ থাকলেও জলাশয়ের সংকট, মাছের আকাল, আর মানুষের ব্যস্ততার ভীড়ে এ প্রাচীণ ঐতিহ্যটি হারিয়ে যেতে বসেছে।
দখলবাজদের নানামুখী থাবায় দিন দিন গ্রাম-গঞ্জে পুকুর-জলাশয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ কারণে ও জালের ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সবাই।
শরীয়তপুরের ভোজেশ্বর, আঙ্গারিয়া, বুড়িহাট ও পট্রি বাজারের একসময়ের কয়েকজন জন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবহমান কাল থেকে পদ্মা, মেঘনা, কীর্তিনাশা, জয়ন্তিয়া নদী বিধৌত এ ভূখণ্ডে মাছ ধরায় জাল ব্যবহার হয়ে আসছিল। ঝাঁকি জালের মধ্যে বাটালি জাল, কইয়া জাল, ছটকি জাল, দুঁই জালসহ হরেক রকম জালের চাহিদা ছিল বেশ। যদিও এখন আর আগের মতো খাল-বিল পুকুর নদী নালায় সে ধরণের মাছ নেই। এমন একটা সময় ছিল যখন আমাদের জেলার অধিকাংশ ঘরেই এক বা একাধিক ঝাঁকি জাল থাকতো। তখন গ্রামের জাল বোনার দক্ষ করিগরের বেশ মূল্যায়নও ছিল। আজ এর সবই স্মৃতি!
প্রবীণ জেলে সনাতন দাস জানান, জালের মধ্যেও রয়েছে হরেক রকম ফের। যেমন আকারে ছোট-বড়। অর্থাৎ হাত দিয়ে মেপে জাল পরখ করা হয়। সাধারণত ঝাঁকিজাল নিচে তিন-চার হাত এবং সর্বোচ্চ দশ-বারো হাত লম্বা হয়। বড় জাল অর্থাৎ ১০-১২ হাত লম্বা জাল দিয়ে সবার পক্ষে খেও মারা সম্ভব নয়। এজন্য যথেষ্ট দক্ষতা এবং শারীরিক সক্ষমতার প্রয়োজন। জালের ফাঁসেও রয়েছে তারতম্য। ছোট মাছ ধরার জন্য ক্ষুদ্র ফাঁস। বড় মাছের জন্য বড় ফাঁস। ঝাঁকিজাল বোনা দেখে যতটা সহজ মনে হয়, প্রকৃতপক্ষে তা বেশ কঠিন কাজ। বিশেষ করে জালের ফাঁসের গেরো বা গিঁট শক্ত করা নিপুণ কারিগরি কাজ। ফাঁসের গিঁট দুর্বল হলে তাতে মাছ মিলবে কম। গিঁট শক্ত হলে মাছ যেমন বেশি মিলবে, তেমনি জাল হবে টেকসই। জাল কতটা ফুলের পাপড়ির মতো চারপাশে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে, সেটাও জাল বুনিয়েদের দক্ষতা প্রমাণ করে। জালের নিচে অর্থাৎ শেষ প্রান্তে এক ধরণের থলে থাকে। যা আঞ্চলিক ভাষায় ‘খই’ বলা হয়। এতে ছোট আকারের মাছ গিয়ে জমা হয়। ঝাঁকিজালে লোহার কাঠি বা সীসার গুলি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এতে জালের ওজন বাড়ে। মাছ বেরিয়ে যেতে পারে না।
প্রবীণদের মতে, ঝাঁকিজাল বোনা একটা সময়ে বহু মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস ছিল। ঝাঁকিজাল কেনাবেচাও অনেকের পেশা ছিল। একনাগারে চার-পাঁচ দিনে ৫-৭ হাত লম্বা ঝাঁকিজাল বোনা সম্ভব হয়। এভাবে অনেকে সারা বছর ঝাঁকিজাল বুনতো। কারও কারও ঝাঁকিজাল বোনা ছিল শখ। শরীয়তপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি সাপ্তাহিক হাটে ঝাঁকিজাল কেনাবেচার নির্দিষ্ট স্থান ছিল। যেখানে সারি সারি জাল ঝুলিয়ে রাখা হতো। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জাল কেনার জন্য হাটে যেত। কেবলমাত্র জাল কেনাবেচার জন্য এখনও অনেক সাপ্তাহিক হাট বিখ্যাত হয়ে আছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।