
আজ ১৪ জুন দানবীর অমৃত লালদে এর ২৭ তম প্রয়ান দিবস। ১৯৯৩ সালের এ দিনে তিনি পরোলোক গমন কনের।
তিনি ১৯২৪ সালের ২৭ জুন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার চন্ডীপুরে, পাঁচগাও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ।তাঁর পিতা রাসমোহন দে এবং মা সারদা দেবী।তিনি ১৫ বছর বয়সে বরিশালে শহরে চলে যান। সেখানে তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেন ।১৯৪৭ সালে দাঙ্গার পরে নিজ গ্রামে র আত্মীয় স্বজনরা তাকে ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দেন কিন্তু এ দেশের মায়ার টানে আবার তিনি বরিশালে চলে যান ।এতেই প্রমান হয় বরিশাল বাসি কে কতো ভালোবেসে ছিলেন তিনি।
অমৃত লাল দে ছিলেন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার গুরু,ব্যাক্তিত্ব, দরদী মন ও শ্রমিক-কর্মচারিদের প্রতি সৌভ্রাতৃত্ববোধের জন্য তিনি সকলের অমৃত দা বা বড়কাকু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র ছিল “কর্মই ধর্ম “। অভাবের তাড়নায় কিশোর বয়সে জীবিকার সন্ধানে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন পথে । ঘাটি গাড়েন বরিশালে ।
যে বয়সে সকলের লেখাপড়া কথা সে বয়সই তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন কঠিন জীবন সংগ্রামের।তিনি গরীব অসহায়দের নিয়ে তামাক দিয়ে বিড়ি বানানো শুরু করেন সেই ছোট্ট কারখানা টি আজ সারা বাংলাদেশে কারিকর বিড়ি হিসাবে পরিচিত লাভ করে বহু বাঁধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে সততা, নিষ্ঠা আর মানসিক দৃঢ়তার জোরে কাল ক্রমে তিনি হয়ে উঠেছিলেন শিল্পপতি । কিন্তু পেছনে ফেলে আসা দুঃসময়ের দিন গুলি তিনি ভুলে যাননি ।
তাই আমৃত্যু নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন সমাজ সেবায়।শৈশব-কৈশোর কালে দারুণ আর্থিক সংকটের কারণে লেখা পড়ার সুযোগ পাননি ।তাই শিক্ষা বিস্তারকে তিনি রেখেছেন অতুলনীয় স্বাক্ষর ।
তাঁর প্রচেষ্টায় বৃহত্তর বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য অনেক আর্থিক অনুদান করেছেন । এ ছাড়াও তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকল্পে অকাতরে দানের মধ্য দিয়ে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় অর্জন করেছিলেন । তিনি বিক্রমপুরের মেয়ে যোগমায়া কে বিয়ে করেন ।
তার দুই ভাই রাখাল চন্দ্র দে এবং বিজয় কৃষ্ণ দে। তাঁর কর্মময় জীবনে স্থায়ীয় সরকার ও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থায় তিনি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ।
অমৃত লাল দে অনেক জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে আসীন ছিলেন। বরিশাল শহরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান করেছেন যেমন-বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রামকৃষ্ণ মিশনে চানু স্মৃতি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন, সারদা ভবন, সারদা ঘাটলা নির্মান, মমতাজ মজিদুন্নেছা গার্লস স্কুল, জগদীশ সারস্বত গার্লস স্কুলের অমৃত ভবন, ও যোগমায়া ভবন নির্মাণ, কাউনিয়া উচ্চ গার্লস স্কুল নির্মানে আর্থিক সহায়তা, বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরির নতুন ভবন নির্মাণে,মুকুল স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মানে, বরিশাল ক্লাবের অমৃত লাল দে মিলনায়তন নির্মান, বাকেরগঞ্জের সাহেবগঞ্জ নাজমুল করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে আর্থিক সহায়তা করেন ।
দানবীর অমৃত লাল দে এর নামে আয়ুর্বেদ মহাবিদ্যালয়, একটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অমৃত লাল দে সংগীত একাডেমীসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উঠেছে ।এই দানবীর মৃত্যুর আগমুহূর্তে বরিশাল নগরীতে অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।যা দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত । তিনি দুঃখী অভাব মোচনে তাঁর উদার চিত্তে দান তাকে দানবীরের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
তিনি বরিশালের লোকসাহিত্য,অশ্বিনী কুমার রচনা সমগ্র, আচার্য জগদীশ কথা মৃত্যু,বরিশাল ধর্মরক্ষিনী সভা কামিনী সুন্দরী চতুষ্পাঠী: ইতিহাস ও বিকাশ, বাখরগঞ্জ জেলার ইতিহাস প্রভৃতি গ্রন্থের তিনি প্রকাশক।
অমৃত পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্প্রতি আরো কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে । অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একপর্যায়ে ১৯৯৩ সালের ১৪ জুন,এই ক্ষনজন্মা দানবীর মানুষটি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে কোলকাতায় ইহলোক ত্যাগ করেন । তাকে অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমাধিস্থ করা হয় ।
শরীয়তপুরে এ সন্তান নড়িয়া উপজেলার রাম ঠাকুর আশ্রমের একজন ভক্ত ছিলেন। জেলা বাসীর প্রত্যাশা তার উত্তোরসরিরা মহান এ মানুষটিকে এ জেলার মানুষের হৃদয়ে স্মনণীয় করে রাখতে তার নামে বরিশালের মত না হউক কিছু হলেও প্রতিষ্ঠার প্রতিষ্ঠা করা।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।