বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলকদ ১৪৪৪ হিজরি
বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
Notice: Undefined index: top-menu-onoff-sm in /home/hongkar/public_html/wp-content/themes/newsuncode/lib/part/top-part.php on line 67

অজানা রোগ থেকে মুক্তি চায় রোকিয়া

অজানা রোগ থেকে মুক্তি চায় রোকিয়া
২০ বছর বয়সি তরুনী রোকিয়া আক্তার। ছবি-দৈনিক হুংকার।

অজানা দুরারোগে আক্রান্ত ২০ বছরের তরুণীর চিকিৎসা না পেয়ে ২০ বছর ধরে অসহায় জীবনযাপন করছেন। এই অজানা রোগ থেকে মুক্তি চায় রোকিয়া।
রোকিয়া শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের মৃত আলম শেখের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে বড় বোন মানসিক প্রতিবন্ধী ও সে ছোট। বর্তমানে এক চাচার আশ্রয়ে আছেন তিনি।
খবর পেয়ে শনিবার (২৪ অক্টোবর) তার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, রোকিয়ার শারীরিক গঠন প্রায় কঙ্কালসার। দেখতে ৭ থেকে ৮ বছরের শিশুর মতো। মেয়েটির চেহারা জীর্ণ-শীর্ণ। অথচ তিনি ২০ বছরের তরুণী। শারীরিক অসুস্থতা ও অভাবঅনটনে ভিক্ষাবৃত্তি করে কাটে তাঁর জীবন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রোকিয়ার জন্ম ২০০০ সালে। ২০০৩ সালে তিনি জ্বর ও ঠান্ডায় ভোগেন। সেদিন থেকে শুরু হয় রোকেয়ার ভীত সন্ত্রস্ত জীবন। এরপর দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে কাটে। ২০০৪ সালে হঠাৎ তাঁর মা পিয়ারা বেগম ডেলিভারির সময় মারা যান। রোকিয়ার অসুস্থতা আরও বাড়ে। এক পর্যায়ে তাঁর শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। এই সমস্যা দিন দিন আরও প্রকট হয়। দরিদ্র বাবা মেয়ের কোনো চিকিৎসা করাতে পারেননি। উল্টো অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে বিক্রি করতে হয়েছে ভিটেমাটি।
এরই মধ্যে ২০১০ সালে রোকিয়ার বড় বোন মানসিক প্রতিবন্ধী সীমা আক্তার (২৪) নিখোঁজ হন। আর ২০১৬ সালে তাঁর বাবা আলম শেখ মারা যান। এবার অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন রোকিয়া। আশ্রয় মেলে চাচার বসতঘরের বারান্দায়। কিন্তু তাঁর খাবারের জোগান হবে কীভাবে। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয় কার্তিকপুর বাজার ও ডিঙ্গামানিক গ্রামে ভিক্ষা করতে শুরু করেন তিনি। অজানা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৭ বছর পার হলেও অর্থের অভাবে এখনো চিকিৎসককে দেখাতে পারেননি মেয়েটি। ফলে কোনো চিকিৎসাও জোটেনি তাঁর।
রোকিয়ার প্রতিবেশী চাচাতো বোন তাসলিমা আক্তারের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, রোকিয়ার আপন কেউ নেই। আমরাই এখন ওর আপনজন। আমার বাবা দরিদ্র মানুষ। ভাইয়েরা সংসার খরচ দেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর শতভাগ ব্যয় বহন করতে পারছি না। চোখের সামনে তাঁকে কষ্ট পেতে দেখে খারাপ লাগে। কিন্তু কী করার আছে। মেয়েটি সরকারি কোনো সহায়তা পান না, কেউ কোনো ভাতাও দেন না।
রোকিয়ার প্রতিবেশী চাচি সুফিয়া বেগম বলেন, দারিদ্র আর অর্থকষ্টে মেয়েটি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে। চিকিৎসা তো দূরের কথা, সে কি রোগে আক্রান্ত, তা–ও কেউ জানে না। চেয়ারম্যান-মেম্বার সবাই তাঁর এই অবস্থার কথা জানেন। কিন্তু কেউ তাঁর পাশে দাঁড়াননি। ওর থাকার একটি ঘরও নেই। এভাবেই অবহেলা-অনাদরে একসময় তাঁকে হয়তো পৃথিবী থেকেই বিদায় নিতে হবে।
স্থানীয় ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সিদ্দিক হাওলাদার বলেন, মেয়েটি অনেক অসহায় তার কেউ বেঁচে নেই। তার প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য কাগজপত্র জমা নিয়েছি। শিঘ্রই পেয়ে যাবে।
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মমিনুর রহমান বলেন, আমাদের অফিস থেকে মেয়েটিকে আগে জরিপ করা হয়েছে এবং কয়েক বছর আগেও জরিপ করা হয়েছিল তাকে। আমাদের সমাজসেবার উদ্যোগে যেকোনো অসহায় দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সহায়তা করা হয়। মেয়েটির পরিবার বা তাঁর কোনো স্বজন আবেদন করলে তাঁকে সহযোগিতা করা যাবে।
নড়িয়ার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আল নাসীফ বলেন, মেয়েটি সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁকে চিকিৎসা সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে সহায়তা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।