
শরীয়তপুর জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই পর্বে শরীয়তপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতি চিত্র-২ প্রকাশ করতে চলছি। দুর্নীতির সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আ. হান্নান শেখ ও তার সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌলশীগণ। স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ঠিকাদারদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করেছেন সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ। গণমাধ্যম কর্মীদের ভয়ে দপ্তর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ উপ-সহকারী ও সহকারী প্রকৌশলীগণ। মাঝে মধ্যে রাতের আঁধারে অফিসে বসেন প্রকৌশলীরা। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেলে দপ্তর থেকে দ্রুত বেড়িয়ে পালিয়ে যান তারা।
এবার দেখা যাচ্ছে নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক ও চামটা ইউনিয়নের দিনারা কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন নতুন করে নির্মাণের জন্য ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বরাদ্দ প্রদান করেছে সরকার। ভূমখাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য কর্তৃপক্ষ ফরিদপুর জেলার শাহারিয়ার কনস্ট্রাশনকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ করেন। ওই কমিউনিটি ক্লিনিক আইডি নং-৩৯৮৯৪৫ এবং চুক্তি মূল্য ২৮ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেন।
আর দিনারা কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের আইডি নং-৩৯৮৯৬৪ এবং নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২৮ লাখ ২ হাজার টাকা। ভূমখাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ সাইডে গিয়ে কোন ঠিকাদার বা নির্মাণ শ্রমিক পাওয়া যায় নাই। পাওয়া যায়নাই কোন নির্মাণ সামগ্রী। সেখানে এখনো ৩ ফুটেরও বেশী উচ্চতায় পানি রয়েছে। অথচ সেই কাজের সাইড থেকে ৩ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী, তার সহকারী ও উপসহকারী প্রকৌশলীগণ।
দিনারা সাইডে গিয়ে জানা যায় চলতি বছরের জুলাই থেকে সেখানে কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন নির্মাণের আংশিক কিছু কাজ হয়েছে। প্রায় মাস দুইয়েক ধরে সেখানে কাজ বন্ধ। অথচ গত অর্থ বছরে সেই কাজের সাইড থেকেও ৮ লাখ টাকা পরিমান বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরকুমারিয়া এফডাব্লিউসিতে গিয়ে দেখা যায় আলাউদ্দিন নামে একজন শ্রমিক সরদার নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছেন। তার সাথে কথা বলে জানাযায়, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আ. হান্নান শেখের ভাগ্নে মুফতি নড়িয়ার ভূমখাড়া, দিনারা, গোসাইরহাট ও চরকুমারিয়ার সকল ভবন নির্মাণ কাজ করে। কাজ না করে বিল উত্তোলনের পদ্ধতি জানতে চাইলে সেই শ্রমিক সরদার জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে সম্পর্ক ভালো থাকলে কেউ কাজ না করেও বিল নিতে পারে। আবার অনেক ঠিকাদার আছে কাজ করেও বিল পায়নাই। তিনি আরও জানায় নির্বাহী প্রকৌশলী হান্নান শেখ, সহকারী প্রকৌশলী রাজিয়া, রানা দাস ও উপসহকারী প্রকৌশলী রাব্বি কাজের সাইড তদারকি করেন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশলের নিবন্ধিত ঠিকাদার ও মেসার্স সপ্লীল ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ইয়াহিয়া খান বলেন, আমরা স্বাস্থ্য প্রকৌশল মাদারীপুর ডিভিশনের নিবন্ধিত ঠিকাদার। আমরা কাজ সম্পন্ন করে বিল পাই না। নির্বাহী প্রকৌশলী নামে বে-নামে কাজ নিয়ে তার ভাগ্নে মুফতিকে দিয়ে বিল তুলে আত্মসাৎ করতেছে। এই বিষয়ে আমরা গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। বিষয়টি তদন্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
ভূমখাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের জমিদাতা এএসএম ইসমাইল খান দুলাল বলেন, বছর খানেক পূর্বে এক মহিলাসহ কয়েকজন পুরুষ এসে প্রকৌশলী দাবী করে। তারা ক্লিনিকের নির্ধারিত জমি বুঝে নিতে চায়। আমরা তাদের জমি বুঝিয়ে দিয়েছি। তারপর থেকে আর কোন কার্যক্রম দেখছি না।
নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. তারিকুল ইসলাম রাজিব বলেন, ভূমখাড়া ও দিনারায় দ্ইুটি কমিউনিটি ক্লিনিকের নতুন ভবন হওয়ার কথা ছিল। প্রায় দুই বছর পাড় হতে চলছে তার কোন কার্যক্রম দেখছি না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার চিঠি লিখেছি। চলতি অর্থবছরে দেখছি দিনারা কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজ শুরু করেছে। ভূমখাড়ায় এখনও কোন কার্যক্রম শুরু হয় নাই। কোন বিলের কাগজে আমার স্বাক্ষর নেয় নাই। কিভাবে বিল উত্তোলন করেছে আমি তা জানিনা।
দুর্নীতি চিত্র-১ এ বলা হয়েছে প্রকৌশলীরা রাতের আধারে গেইটে তালাদিয়ে অফিস করেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি পেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। ফোন কলও রিসিভ করে না। তাই তাদের মতামত প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
শরীয়তপুর-মাদারীপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতি চিত্র-৩ দেখতে অপেক্ষা করেুন।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।