
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু করোনা সংকটে বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষিরা। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের।
এদিকে ফলন ভালো হলেও গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বেশিরভাগ জমিতে পানি জমে গেছে। শিলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের পাকা ধান। আবার অনেক জমিতে ধান পাকতে শুরু করলেও কাটার জন্য শ্রমিক সংকটে ফসল ঘরে তোলা নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষকের।
সরেজমিনে মঙ্গলবার জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরের চরভাগা গাজী কান্দি,চরহোগলা গাজী কান্দি, মেহেরজান সরকার কান্দি, চরহোগলা আহমদ উল্লাহ সরকার কান্দি, চরহোগলা আবুল হোসেন সরকার কান্দি, চরভাগা দেওয়ান কান্দি, এলাকার চারটি ইরি ব্লকের জমিতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। কৃষকরা জানিয়েছে ওই ইরি ব্লক গুলোর ৪ হাজার ৫৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। তা এখন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইরি ব্লকের পাশ দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাছের ঘের তৈরি করে জমির পানি সরানো যাচ্ছে না।
এছাড়াও উপজেলা সখিপুর, কাঁচি কাঁটা, উত্তর তারাবুনিয়া, রামভ্রপুরের ইরি ব্লক গুলোতে অনেক জমির বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কাঁচা-পাকা ধানের ছড়া। যা কয়েকদিনের মধ্যেই সোনালি ধানে ভরে যাবে। এমন দৃশ্য কৃষক মনে প্রশান্তি যোগালেও শ্রমিক সংকটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। করোনার সংক্রমণের ভয় ও সারাদেশে লকডাউনের কারণে বেশি মজুরি দিয়েও কোন শ্রমিক পাচ্ছেন না তারা।
চরভাগা ইরি ব্লকের মালিক ফয়ছাল গাজী (৩০) বলেন, আমাদের জমিগুলোর পাশে কয়েকটি মাছের প্রোজেক্ট হয়েছে। এখন পানি নামানোর পথ বন্ধ হয়েগেছে। আমাগো জমিনের ধান তলিয়ে যাচ্ছে। জমি থেকে পানি সরাতে না পারলে ধান গুলো সব পচে যাবে। আমরা কোন উপায় অন্ত খুজে পাচ্ছিনা।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরহোগলা গ্রামের ইরিব্লক এর মালিক মোছলেম খা (৪৫) বলেন, এ বছর জমিনে ফলন খুবই ভাল হয়েছে। ব্লকে অনেক জমিনের ধান পেকে রয়েছে। ধান কাটার শ্রমিক নাই তাই আমরা ধান কাটতে পারিছনা।
বোরোর এই বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলে দেখা দিচ্ছে শ্রমিক সংকট। আকাশে একটু মেঘ দেখলেই চাষিদের চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। কিভাবে তারা সোনার ফসল ঘরে তুলবে। এনিয়ে মহান মিয়া (৪২) নামে আরেক কৃষক বলেন, আমি এক কানি জমিনে ধান চাষ করেছি। আমাদের আসে পাশের প্রায় ৬টি ইরি ব্লক রয়েছে যেগুলি নিচু জমি। আমারা আগের ভাগেই ওই জমিনে ধান চাষ করি। আবার আগের ভাগেই ধান গুলো তুলে নেই। এ বছর বৈশাখের শুরুতেই বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হয়ে গেছে। জমিতে পানিও জমে গেছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪হাজার ৫৯৯ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৬২২ হেক্টর জমি। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ২২৩ মেট্রিকটন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা ফাতেমা ইসলাম বলেন, সখিপুরের চরভাগা এলাকায় বাঁধের কারণে কয়েকটি ব্লকে পানি জমেছে এমন খবর আমরা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। মাঠকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খোজ নিয়ে ওই ইরি ব্লকের পানি অপসারনের ব্যাবস্থা করা হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর-আল-নাসীফ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ধান কাটার শ্রমিকসংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলায় কয়েকটি ধান কাটার যন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন যন্ত্র দিয়ে কৃষকের ধান কাটার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ বিঘা জমির ধান কাটা, মাড়াই, পরিষ্কার ও বস্তাভর্তি করা সম্ভব। অন্যদিকে রিপার মেশিনের মাধ্যমে ঘণ্টায় দুই বিঘা জমির ধান কাটা যাবে। এতে খরচ সাশ্রয় হবে ৯০ ভাগ। তিনি বলেন, এ ছাড়া বাইরের কয়েকটি জেলা থেকে অনেক শ্রমিক ধান কাটতে শরীয়তপুর আসেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ওই সব জেলার শ্রমিক সরদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।