
পুকুর কেটে খাল বন্ধ করে দেয়ায় ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরসেন্সাস ইউনিয়নের ২শ একর জমি জলাবদ্ধ হয়ে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার মতে এ জলবদ্ধতার ফলে ঐ এলাকার কৃষক ও জমির মালিকরা বার্ষিক ২০ থেকে ২২ লক্ষ টাকার ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যপারে ভূক্তভোগী জমির মালিক ও কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবরে লিখিত আবেদন করেছে।
সরেজমিন ঘুরে ও ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে আলাপ করে জানাযায়, চরসেন্সাস ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের ১০৭ নং চরসেন্সাস মৌজার বালাকান্দি গ্রামের প্রায় ২শ একর জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় গিয়াস উদ্দিন মোল্যা পুকুর কেটে খাল বন্ধ করে দেয়ায় গত ২ বছর ধরে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ও স্থানীয় তারবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হোসেন বেপারী বলেন, এ বিলে আমার ৩ একর জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। তিন ফসলী আমার ঐ জমি থেকে প্রতি বছর যা ফসল আসতো তা দিয়ে আমার সারা বছরে চাহিদা পুরন হতো। এখন গত বছর থেকে গিয়াস মোল্যা খাল বন্ধ করে দেয়ায় আমার জমিসহ প্রায় ২ থেকে আড়াইশ একর জমি কোন চাষাবাদ করতে পারেনা। আমরা এ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেন করেছি।
ওই এলাকার অধিবাসী ও চরসেন্সাস ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুর ওয়াদুদ বালা বলেন, খালে বাঁধ দেয়ার অধিকার কোন ব্যক্তির নাই। অথচ নিজে জমি দাবী করে গিয়াস উদ্দিন মোল্যা বাঁধ দিয়ে ২শ এক জমির ৭০/৮০ মালিক ও শতাধিক চাষীকে ভোগাচ্ছে। আমার ছোট ভাই জেলা পরিষদ সদস্য বিএম আনোয়ার হোসেন বালা গত বছর সমস্যা সৃষ্টির পরে ৪ ইঞ্চি পাইপ বসিয়ে দিয়েছিল। তাতেও কোন উপকার হয়নি। খালটি বাঁধ মুক্ত না করলে এ সমস্যা সমাধান হবেনা। আমরা স্থানীয় ভাবে ব্যর্থ হওয়ার পরেই ভূক্তভোগীরা প্রশাসনের দারস্থ হয়েছে।
স্থানীয় চরসেন্সাস ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ বোরহান মুন্সী বলেন, বাঁধটি ৫ নং ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়েছে। আর বেশীর ভাগ জমি পরেছে আমার ওয়ার্ডে। আমি ও আমাদের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য শাকুরুল ইসলাম মিলে অনেক চেষ্টা করেছি তারা শোনেনি। খালটি সচল না করলে কোন ভাবে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আমরা দায়িত্ব নিয়ে খাল মুক্ত করতে গেলে সংঘাত সংর্ঘষ হতে পারে তাই আমরা প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছি।
গিয়াস উদ্দন মোল্যার পুত্র চরসেন্সাস ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ মোল্যা বলেন, আমরা আমাদের জমিতে পুকুর করেছি। খালটি সংস্কার হউক তা আমিও চাই! তবে আমাদের ক্ষতি করে করতে দিবনা। মোটা পাইপ ব্যবহার করে করলে করতে পারে। তা ছাড়া খালের উপরের সরকারি কালভাটটি গভীরতা কম হওয়ায় পানি সরতে বিলম্ব হয়। কালভাটটি গভীর করলে সমস্যা থাকবেনা।
চরসেন্সাস ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জিতু মিয়া বেপারী বলেন, সামান্য ১ কি ২ শতাংশ জমির জন্য শত শত একর জমি চাষাবাদ বন্ধ। আমি আগেও অনুরোধ করেছি আবার আপনাদের মাধ্যমে অনুরোধ জানাই মানুষকে কিছু দিলে তা বিফলে যায়না। গিয়াস মোল্যার পরিবার সামাজিক ও রাজনৈতি পরিবার হিসেবে আমাদের ডাকে সারা দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম জানান, বিষয়টি জানার পরপরই আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। আমি আমাদের উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় দ্রুত ও শান্তিপুর্ণ উপায়ে যাতে সমস্যার সমাধান করা যায় তার চেষ্ট করছি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আল নাসীফ বলেন, অভিযোগ পত্রটি আমি আমাদের সহকারী কমিশনান (ভূমি) কে দিয়েছি তিনি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। পূর্বে থেকে পানির প্রবাহ থাকলে খাল উদ্ধার করা হবে।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।