
বর্নার পানি বৃদ্ধি ও প্রবল স্রোতের কারণে খুলনা-চট্টগ্রাম ভায়া শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মেঘনা নদীর নরসিংহপুর হরিনা ফেরী সার্ভিসের নরসিংহপুর ঘাটে পারাপারের জন্য গত ৮/১০ দিন ধরে অপেক্ষা করে আছে শত শত যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। গত ২৯ জুলাই ফেরীঘাটের এই নাকাল অবস্থার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস.এম আশরাফুজ্জামান ও এনএসআই’র যুগ্ম পরিচালক মিজানুর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, ঘাট ম্যানেজার আব্দুল মোমেন, সখিপুর থানা অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক, অফিসার ইনচার্জ ডিবি সাইফুল আলম, টিআই শামীম সরোয়ার সহ পুলিশের কর্মকর্তা ও জেলার বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
এসময় ভোক্তভোগী চালক ও ঘাটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে আড়িচা ও কাঠালবাড়ি ফেরী চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় এ ঘাটের উপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে ৬টি ফেরী চলাচল করে। তীব্র স্রোত আর বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ফেরী গুলো ধারণ ক্ষমতা নিয়ে উজান ফেলে ঘাটে ভিড়তে না পারায় জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করে ফেরী চলাচল করতে হয়। এর ফলে পরিবহন পরাপারের চাপ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা মেট্টো-১১-১৯৭৫ এর চালক আবুল কালাম বলেন, এ মাসের ২১ তারিখ থেকে ঘাটে আটকা পরে আছি। অনেক সময় সিরিয়াল বঙ্গ করে বিশেষ পারপারের কারণে গরু ও পচনশীল পণ্যের গাড়ী আমাদের পিছনে রেখে সামনে চলে যায়। ফলে আমরা ৮ দিনেও পার হতে পারিনি।
যাত্রীবাহী বাস দিদার পরিবহনের চালক রাশিদুল ইসলাম বলেন, ঘাটে ফেরী সংকটের কারণে আমরা দিনের পর দিন বসে রয়েছি। যাত্রীরা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। সময় মতো আমরা ঈদে ঘরে ফিরতে পারবো কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।
ঘাটের দায়িত্বরত কর্মচারী মনির হোসেন জানান, বিআইডব্লিউটিসির লোকজন রহস্য জনক কারণে ফেরী চলাচলে বিলম্ব সৃষ্টি করে। এতে করে ঘন্টার ঘন্টা অপেক্ষা করেও পারাপার হতে পারেনা অনেক যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। এতে করে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন কমে আসছে তেমনি ভাবে ঘাটে আশা পরিবহন, চালক ও মালিকদের লোকশানের বোঝা বইতে হচ্ছে।
ঘাটের ইজারাদার ও স্থানীয় চরসেন্সাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিতু মিয়া বেপারী বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাটের পল্টুন ডুবে গেছে। এছাড়া প্রবল স্রোতে সময় মত ফেরী ঘাটে ভিড়তে না পাড়ায়ও ঘাটে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। শরীয়তপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একজন যানবাহন পরিদর্শক সহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আমাদের ঘাটের কর্মচারীদের নিয়ে যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিআইডব্লিউটিসি ঘাট ম্যানেজার মোমেন আহমেদ বলেন, পূর্বেও ৬টি ফেরী চলতো। এখনো ৬টি ফেরীই চলে। তবে প্রবল স্রোতের কারণে জোয়ার বাটার উপর নির্ভর করে আমাদের ফেরী গুলো চালাতে হচ্ছে। এতে করে যানবাহন পারাপার কিছ্টুা ধীরগতি রয়েছে। এছাড়াও ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানীর গুরুর ট্রাক বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাটে যানজট পরিলক্ষিত হয়।
ঘাটে অপেক্ষমান শ্রমিকদের দাবী ও উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস.এম আশরাফুজ্জামান বলেন, ফেরী সংকট, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও প্রবল স্রোতের কারণে এখানে ৭/১০ পর্যন্ত যানবাহন আটকে আছে শুনে আমি ঘাট পরিদর্শনে আশি। এ ঘাটে চাঁদাবাজী বন্ধের জন্য ইতিমধ্যেই ট্রাফিক পুলিশ দিয়েছি। তারা কাচামাল, পচনশীল পণ্য ও গরুর ট্রাকের সাথে যাত্রীবাহী বাস পারাপারে সহযোগিতা করছে। এর পরেও যানবাহনের চলাচল স্বাভাবিক করতে আমি বিভিন্ন মহলে কথা বলবো। বিশেষ করে আমাদের মাননীয় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলে দ্রুত যাতে এ সমস্যার সমাধান করা যায় তার জন্য চেষ্টা করবো।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।