
ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরসেন্সাস ইউনিয়নের নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন বেড়াচাক্কি গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে ফুর্তি করার সময় আটক যুবকের বিচার করে শালিসরাই এখন আসামী হয়েছেন। এই নিয়ে ওই এলাকার মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী দোষীদের দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার দাবী করেছেন।
২৭ জুন শনিবার ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, গত রমজানের পূর্বে এক সন্ধ্যায় উত্তর তারাবুনিয়া চেয়ারম্যান স্টেশন বাজারের এক প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে চরসেন্সাস ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের চোকদার কান্দি গ্রামের শহীদ রাড়ীর পুত্র জাহিদুল ইসলাম (দিক্কা) রাড়ী ও তার সঙ্গি একই এলাকার মনু গাজীর পুত্র জহির গাজী স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পরে। পরে মহিলাকে স্থানীয় ছাত্তার গাজীর বাড়ীতে রেখে পার্শ্ববর্তী নরাই বাজারে স্থানীয় মেম্বার মোঃ সৈয়দ মাঝির নেতৃত্বে শালিস বসে। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিতু বেপারীর নির্দেশে মহিলা সসম্মানে তার আত্মীয়ের পৌঁছে দেওয়া হয়। অপর দিকে জাহিদুল ইসলাম তার দোষ স্বীকার করায় তাকেও ছেড়ে দেওয়া হয়। এসময় মনু গাজীর পুত্র ছাত্রলীগ নেতা জহির গাজী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ওই ঘটনার সময় অভিযুক্ত ধিক্কা সকল কিছু মেনে চলে গেলেও ঘটনার ১৫ দিন পরে মেম্বার সৈয়দ মাঝিকে ফোনে জানান, ওই ঘটনার সময় তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও একটি মোবাইল ফোন কে বা কারা নিয়ে গেছে। তিনি ওই জিনিস গুলো ফেরৎ চান। শুধু ফেরত চেয়ে ক্ষান্ত হননি। ওই দিনের ঘটনায় যারা তাকে আটক করেছিল তাদের বাবুল হাওলাদারের ছেলে তাজুল হাওলাদারকে আটক করে মারধর করে। এরপরে অভিযুক্ত ধিক্কার বড় ভাই বাদী হয়ে মুল ঘটনা আড়াল করে শরীয়তপুর পুলিশ সুপার বরাবরে একটি অভিযোগ করে। গত ২৩ জুন সখিপুর থানার এসআই শীব শংকর ওই ঘটনা তদন্ত করতে গেলে এলাকাবাসী ও বিচারকগণ অবাক হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও শালিস মোঃ জিল্লুর রহমান মুন্সি বলেন, ওই ঘটনার পূর্বেও এই জাহিদুল ইসলাম ধিক্কা আরও দুইবার একাধিক নারী নিয়ে এ এলাকায় এসেছে। ঘটনার দিন সে তার এলাকা থেকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে সখিপুর উত্তর তারাবুনিয়া-দক্ষিন তারাবুনিয়া হয়ে ওই মহিলাকে নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে এ এলাকায় আসে। স্থানীয় যুবকরা টের পেয়ে তাকে অনুসরণ করতে থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এ এলাকায় অবস্থান করায় রাত ৮টার দিকে নদীর পার থেকে মহিলা সহ দিক্কাকে আটক করে। মহিলাটিকে স্থানীয় ছাত্তার গাজীর বাড়ীতে রেখে পাশের নরাই বাজারে শালিস বসে। এরই মধ্যে চরসেন্সাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিতু মিয়া বেপারী আমাকে ফোনে জানান, মেয়েটির দুইটি বাচ্চা আছে। ওর স্বামী বিদেশ থাকে। ওর সংসারটি যেন না ভাঙ্গে সেই ব্যবস্থা করেন। আমরা তার কথা শুনে মেয়েটিকে দক্ষিন তারাবুনিয়া আফা মোল্যার বাজারের পাশে ওর বোনের বাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে আসি। এখন দেখি আমি দিক্কার টাকা পয়সা ছিনতাইয়ের মামলার আসামী।
স্থানীয় মেম্বার মোঃ সৈয়দ মাঝি বলেন, আমরা রাত ৮টার পরে এলাকাবাসীর হাত থেকে ওই মহিলা ও ছেলেটিকে উদ্ধার করে শালিস মিমাংশার মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংশা করে দেই। তখন দিক্কার কোন কিছু হারিয়েছে বা খোঁয়া গেছে এমন কিছুই সে বলেনি। ঘটনার ১৫ দিন পরে তার সমাজের মুরব্বি মোঃ নাসির মুন্সী আমাকে ফোনে জানায় দিক্কার জাতীয় পরিচয়পত্র ও একটি মোবাইল ফোন ওই খোয়া গেছে। পরে আমরা অনুসন্ধান করে তার কোন সন্ধান পাইনি। এরপরে গত ২৩ জুন সখিপুর থানার এসআই শিব শংকর একটি অভিযোগের তদন্ত করতে আমাদের এলাকায় আসেন। তাতে হাবিব খান, সাগর চৌধুরী, তাজুল হাওলাদার, আব্দুর রহিম ছৈয়াল, জিল্লু মুন্সী, আদু বেপারী ও ভাসানীকে আসামী করেছে। দিক্কা ভাই বাদী হয়ে অভিযোগ করেন ঘটনার দিন সে আমাদের এলাকায় বেড়াতে আসলে আসামীরা তাকে ধরে টাকা পয়সা, মোবাইল ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয়। অথচ সে যে নারী নিয়ে ফুর্তি করার সময় এলাকাবাসীর হাতে ধরা পরে সে বিষয়ে কোন উল্লেখ করেনি। এখন বিচারকরা উলটো আসামী হয়ে গেছে। আমরা এই ঘটনার নিন্দা করে সঠিক তদন্ত দাবী করছি।
অপর দিকে দিক্কার ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার হানিফ জানান, দিক্কা ঢাকায় থাকে। সে নেশা সহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যা কলাপের সাথে জড়িত। ঘটনার দিন যেই মেয়েটিকে নিয়ে আসছে তার স্বামী ও দুইটি সন্তান থাকায় আমরা তাকে ছেড়ে দেই। কারণ সবাই যখন বিয়ে পরানো চিন্তা করছিল তখন আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব অবুঝ দুইটি সন্তানের কথা ও মেয়েটি তাকে বাবা বলে ডাকায় তিনি আমাদেরকে সহজ ভাবে মিমাংশা করতে বলেন।
এদিকে যে বাড়ীতে মেয়েটিকে রাখা হয়। সেই বাড়ির গৃহিনী হাজেরা বেগম জানান, লোকজনে ধরে নেয়ার সময় আমাদের মেম্বারের কথায় আমাদের বাড়ির উনি আমাদের ঘরে রাখতে বলে। পরে রাত ১০টার দিকে জিল্লু মামু ও রহমান পাগল্লা তাকে নিয়ে যায়।
অভিযুক্ত দিক্কার মোবাইল ০১৭২০-৮৩৬৮৮৩ নাম্বারে বার বার রিং হলেও সে ফোন তোলেনি। তারই সমাজের মুরব্বির মোঃ নাসির মুন্সী বলেন, ঘটনার সময় দুই যুবক জড়িত ছিল। ছাত্রলীগ বলে একজনকে ছেড়ে দিয়েছে। আর দিক্কাকে চরম মারধর করেছে। আমি চেয়ারম্যানের কাছে সমাজের পক্ষ থেকে এর বিচার চেয়েছি। বিচার না পাওয়ায় এখন আমাদের সমাজের লোকজন যেখানে বিচার পাবে সেখানে আবেদন করেছে। আমি ঘটনার ন্যায় বিচার চাই।
চরসেন্সাস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিতু মিয়া বেপারী বলেন, এই ছেলে ইতিপূর্বে আরো দুইবার মেয়ে নিয়ে ওই এলাকায় গিয়েছিল। এবার ধরা পড়ার পরে এলাকাবাসী বিচার করে দিয়েছে। আমি তার কার্ড ও মোবাইল হারানোর কারণে থানায় জিডি করতে বলেছিলাম। সে তা না করে ঘটনা সম্পূর্ন আড়াল করে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মূলক অভিযোগ করে এলাকাবাসীকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে।
সখিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক বলেন, আমি পূর্বে এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানিনা। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় হয়ে একটি অভিযোগ এসেছে। আর প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগটি সঠিক নয় বলে আমার মনে হয়েছে। অধিকতর তদন্তের পরে আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।