
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানায় এক বাকপ্রতিবন্ধী গৃহবধূকে (২৩) তার শ্বশুর বারেক সরদারের লালশায় অন্তঃসত্বা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় জুনের প্রথম সপ্তাহে একটি শালিস বৈঠকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ৭ লাখ টাকায় মিমাংসা করে স্থানীয় মাতব্বররা।
শরীয়তপুরের কর্মরত সাংবাদিকরা ঘটনাটি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দুপুরে ঘটনাস্থলে যায় এবং সখিপুর থানা পুলিশকে বিষয়টি জানায়। পরে সন্ধ্যায় গৃহবধূর চাচা বাদী হয়ে বারেক সরদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বারেককে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার (২৬ জুন) দুপুরে তাকে শরীয়তপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পাশাপাশি ওই গৃহবধূকে পুলিশের তত্বাবধানে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য আনা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই গৃহবধূকে তার শশুর প্রায়ই ধর্ষণ করত। সম্প্রতি ওই গৃহবধূর ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় মাতব্বররা শালিস বৈঠকে অভিযুক্ত বারেক সরদারকে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেন এবং তার একটি টিনের ঘর ভেঙ্গে নেয়ার সিদ্ধান্ত দেন।
গৃহবধূর চাচা জানান, স্থানীয় মাতব্বররা এ বিষয় নিয়ে এক দফা বৈঠক করেন। বৈঠকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৭ লাখ টাকা জরিমানা ও একটি টিনের ঘরের মাধ্যমে ঘটনাটি মীমাংসা করেন। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তির টিনের ঘরটি ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় ও ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা জমা দেয় স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে। যা ওই গৃহবধূর ব্যাংক একাউন্ডে জমা করা হবে। আর বাকি টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময় দেয়া হয়। সঠিক বিচার পেতে মামলা করেছেন তিনি।
স্থানীয় মাতব্বর মাওলানা আনোয়ার বালা (রোমান) বলেন, গ্রাম্য শালিসের বৈধ্যতা আছে। ওই গৃহবধূর কথা চিন্তা করে, স্থানীয় খোকা বালার বাড়ির ঘাটায় শালিস বসিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে একটি ঘর ও ৭ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। শালিস বৈঠকে আমি, চরসেন্সসা ইউনিয়নের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান রফিক বালা, আরশিনগর ইউনিয়নের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান নাবিল বালাসহ অনেক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় মহিলা সংস্থার শরীয়তপুর জেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রওশন আরা বেগম বলেন, ঘটনাটি শালিস দরবারের বিষয় না। এটা আইনী বিষয়। মাতব্বররা যে কাজটি করেছে অন্যায় করেছে। আমরা চাই অপরাধির সঠিক বিচার হোক।
ধর্ষকের স্ত্রীর রাহিমা বেগম বলেন, আমার স্বামীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। গ্রামের মুরুব্বিদের রায় মানতে হয় এজন্য মেনে গেছি । এখন খাবার খাইতে পারি না। আমার ছেলের বউ ছয় মাস আগে ঢাকা চলে গেছে। এখন এসে বলে সাত মাসের গর্ববতী। স্বামীকে কখনও খারাপ কাজ করতে দেখি নাই বা শুনি নাই। মেয়ের বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক এনেছিলাম ছেলেকে বিদেশ পাঠাবো বলে। গ্রামের মরুব্বিরা আমাদের ঘর ভেঙ্গে নিয়ে গেছে দরবারে রায় হয় ৭ লাখ টাকা ও একটি ঘর। এর মধ্যে নগত ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও একটি ঘর নিয়ে গেছে সাবেক চেয়ারম্যান রফিক বালা, আরশিনগর ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান নাবিল বালা, মাওলানা আনোয়ার হোসেন নোমান সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে এ রায় দেন। তাদের কথা আমাদের না শুনে উপায় নাই।।
সখিপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক বলেন, এ ঘটনায় মেয়েটির চাচা বাদী হয়ে মেয়েটির শশুরের বিরুদ্ধে সখিপুর থানায় নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে মামলা করেছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিকে শুক্রবার দুপুরে শরীয়তপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।