
সতীর্থ সুহৃদ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় অবসর জনিত বিদায় নিলেন ভেদরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সাজনপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব তোফাজ্জল হোসেন সরদার।
একই বিদ্যালয়ে ছাত্র থেকে শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে অবসরে গেলেন তিনি। সেই ১৯৮৬ সালে তিনি বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের মানুষ করা ছিল তাঁর একমাত্র আরাধ্য। তিনি যেন ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মার আত্মীয়। দীর্ঘ ৩৫ বছর শিক্ষকতা শেষে গত ২০২১ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব ফিরোজ হোসেন খান এর সভাপতিত্বে ও শিক্ষক মজিবুর রহমান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মহিষার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ অরুন হাওলাদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন দাতা পরিবারের সদস্য এনআরবি ব্যাংকের উপদেষ্টা মোঃ মোক্তার হোসেন, প্রাক্তন ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সম্পাদক রফিকুল আলম তালুকদার, যুগ্ম সম্পাদক সালাহউদ্দিন স্বপন, প্রাক্তন ছাত্র ও বিশিষ্ট সমাজসেক মোঃ হাসান খান, কমিটির সদস্য আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান ছৈয়াল, পিটিএ কমিটির সভাপতি মোঃ ফারুক খান, সহ-সভাপতি এম. হারুন অর রশীদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, প্রধান শিক্ষক সনজিৎ কুমার বারুরীর।
তারও ২ বছর পরে আজ (২৬ ফেব্রুয়ারী) রবিবার ছিল সাজনপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এ প্রিয় শিক্ষকের বিদায়ী অনুষ্ঠান। ফলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছুটে আসে বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অশ্রুতে আবেগঘন হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। ছাত্র-ছাত্রীরা গাড়িবোঝাই উপহার সামগ্রী দিয়ে শিক্ষককে সম্মানিত করে। রোববার সকালে বিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে আয়োজন করা হয় বিদায় অনুষ্ঠান। সেখানে নামে ছাত্র-ছাত্রীদের ঢল। বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক উপহার সামগ্রীতে ভরে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন এই বিদ্যালয়েই শিক্ষা গ্রহণ করেন। আবার একই বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এই বিদ্যালয়কে ঘিরেই কেটেছে তাঁর জীবন। বিদ্যালয়ের উন্নয়নে দুই হাতে কাজ করেছেন।
বিদায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চেয়ারম্যন হাজি অরুন হাওলাদার বলেন, ‘তোফাজ্জল স্যার শিক্ষায় যেমন জ্ঞানের আলো দিয়ে হাজারো ছাত্র-ছাত্রী তৈরি করেছেন, তেমনি প্রশাসনিক কাজেও ছিলেন অতুলনীয়।’
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সাংবাদিক হারুন বলেন, ‘আমাদের সাবেক প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল স্যারের সান্নিধ্য পাওয়ার কারণেই আমারা অনেকেই দেশের বিভিন্ন উচ্চ আসনে আসিন হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।’
বিদায়ী প্রধান শিক্ষক হাজি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি জীবনে ভাবিনি ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে এত ভালোবাসতেন।’
বিদায়ী অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান ও প্রাক্তন হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি দেখে আমি অভিভূত। জীবনেও কল্পনা করিনি আমাকে ছাত্র-ছাত্রীরা এত ভালোবাসে। আমার ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছুই নেই।’
ছাত্র-ছাত্রীদের উপহার সামগ্রী দেখে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, ‘বাবা ও মায়েরা তোমাদের অনেক কিছু পেয়েছি। তোমাদের উপহার আমার চাওয়া নয়। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছে। আমি তোমাদের দোয়া চাই।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।