
দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে মাদারীপুরের শিবচর পর্যন্ত মহাসড়কটি। ২০১২ সালে পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবহিকতায় ফুল, ফল আর বনজ গাছ যেন শুধুই সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করছে না পরিবর্তিত জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার ঢাল হিসেবে বুক টান করে দাড়িয়ে আছে। সবুজ ঘাসের বুকে উঁকি দিচ্ছে দিগন্ত বিস্তৃত সাদা ঘাসফুল। যা পদ্মা সেতুর দক্ষিণ পাড়ের অঞ্চলকে এক অপূর্ব সৌন্দর্যে সাজিয়ে তুলছে। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলটি সবুজ বেষ্টনিতে পরিণত হবে বলে আশা করছেন জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা সহ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীরা। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসন (আরএস) এলাকা সবুজায়নের ফলে পুরো এলাকা জুড়ে তৈরী হয়েছে ছায়া ঘেরা পরিবেশ। এপ্রোচ সড়কও আগামী ১ বছরের মধ্যে সবুজে বেষ্টিত হবে। ইতিমধ্যে সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসন (আরএস) এলকাজুড়ে খোলা আকাশে মাথা উচু করে দাড়িয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, কৃষ্ণচূড়া, বকুল, কাঞ্চন, সোনালু, মহুয়া, বহেরা, অর্জুন, পলাশ, শিমুলসহ প্রায় ৮০ হাজার ফলদ ও ঔষধি গাছ। ফলে আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলটি সবুজের ছায়াঘেরা একটি মনোরাম পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে বলে আশাবাদি সংশ্লিষ্টরা। এতে করে গত ২-৩ দশকের গাছশূন্য এ চরাঞ্চল পরিনত হবে সবুজ অরণ্যে। । যা ক্ষতিকর জলবায়ুর প্রভাব থেকে এই অঞ্চলকে রক্ষা করবে। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর গোলচত্বর পর্যন্ত ৬ লেনের এই এক্সপ্রেস হাইওয়ের মাঝখানের অংশে লাগানো হয়েছে পাতাবাহার, মশুন্ডা, সোনালু বন্দুন, বোতল ব্রাশ, এরিকা পাম্প, উইপিং দেবদারু, রঙ্গনসহ বিভিন্ন ধরনের বাহারি ফুলের ৬ হাজার গাছ সহ ৫৬ প্রজাতির প্রায় দেড় লক্ষ গাছ রোপণ করা হয়েছে। সড়কের ঢালে ফলজ ও বনজ গাছের চারাও বেড়ে উঠছে বন বিভাগের কর্মীদের পরম যতেœ প্রকৃতির মহিমায়। শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী গন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুর খান বলেন, ‘আসলে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না,মহাসড়কটি ফুলের গাছ দিয়ে এমনভাবে সাজানো হয়েছে। মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছি,দুই পাশের সৌন্দর্য দেখে মন ভরে যাচ্ছে। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ইতালি প্রবাসী খোকন বেপারী বলেন,‘পদ্মা সেতুর এপ্রোচ সড়কের আইল্যান্ডে যে গাছ লাগানো হয়েছে, তা অসাধারণ। এই ১০ কিলোমিটার সড়ক দিয়ে চলার সময় মনে হয় না বাংলাদেশে আছি। উন্নত বিশ্বের কোনও দেশে আছি বললেও ভুল হবে। কারণ সড়কের মাঝে আইল্যান্ডে ফুলের গাছ, দুই পাশে ফলের গাছ, এমন সৌন্দর্যময় প্রকৃতির ছায়ায় সাজানো দৃশ্য আমার চোখে পড়েনি। জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের রোকন ঢালী বলেন, ‘গাছ-পালা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে পরিবেশ কতটা পরিবর্তন করে দিতে পারে তা এই ফুল ও ফলের গাছ দেখেই বোঝা যায়। প্রতিদিন বিকালে এই সড়কে ভিড় করেন সৌন্দর্যপিপাসু মানুষজন। আমরা বলতে পারি পদ্মা সেতু এলাকায় আমাদের বাড়ি। স্থানীয়রা গর্বিত এই সড়ক নিয়ে। তাদের আশা উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ফুল ও ফলের গাছ বড় হলে আরও দৃষ্টিনন্দন হবে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের জাজিরা অংশে ‘বনবিভাগের মাধ্যমে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ গত বছর থেকে সবুজায়নের প্রকল্প হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে ফুল, ফল ও ওষুধি গাছের চারা লাগানো হয়। ইতিমধ্যে এলাকাটি পর্যটন এলাকায় পরিণত হচ্ছে। ভ্রমণ পিয়াসু দর্শনার্থীদের ভীর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামীতে এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক পর্যটন এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে জাজিরা তীরে বনায়ন হচ্ছে। এ বনায়নের ফলে এলাকাটি প্রাকৃতিক নৈস্বর্গিক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে বনায়নের ফলে আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে এ এলাকাটি পর্যটন এলাকার মর্যাদা লাভ করবে। এখনই যে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে তাতে ভ্রমণ পিপাসুদের হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। তাই সরকারের এ উদ্যোগটিকে পদ্মার দক্ষিণ পাড়ের জাজিরার মানুষ অভিনন্দিত করেছে। যা বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যেরই অংশ।
দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।