বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলকদ ১৪৪৪ হিজরি
বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
Notice: Undefined index: top-menu-onoff-sm in /home/hongkar/public_html/wp-content/themes/newsuncode/lib/part/top-part.php on line 67

গ্রাম বাংলায় এখন আর শোনা যায়না ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক

গ্রাম বাংলায় এখন আর শোনা যায়না ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক
গ্রাম বাংলায় এখন আর শোনা যায়না ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক

একটা সময় ছিল আমাদের দাদী,মা,বোন,ভাবী গন ফেরিওয়াদের হাঁকডাক শোনার জন্য উদগ্রীব থাকতেন।কারন তার পছন্দের পন্যটি নিজে চোখে দেখে ক্রয় করবেন সে সুযোগটি লাভের জন্য।

আমি যে সময় কথা বলছি তখন ইচ্ছে করলে আমাদের সমাজের মা বোনরা এখনকার মত বাজারে যেতে পারতোনা। তখন আমাদের নগর সভ্যতা এতটা বিকাশমান ও ছিলনা। আমাদের হাট বাজারের দোকান গুলোর বর্তমান যে চাকচিক্ক বা যৌলুশ ছিলনা বল্লেই চলে। তখকার সময়ে বাজারের বাহারি পন্যের সাধ আস্বাধনের সে যুগের রমনীদের পিতা,শ্বশুর স্বামী দেবর বা চাচা মামাদের উপর নির্ভর করতে হতো। নিতান্ত পছন্দের পন্যটি মনের মতো না হলেও তাদের মুখ বুজে মানিয়ে নিতে হতো।
গাঁয়ের বধু,জায়া ও জননীদের চাহিদার প্রয়োজনে লোকায়ত বাংলায় ফেরিওয়ালা ফেরী পেষার উদ্ভব। যা আজ সভ্যতার গতির সাথে তাল মিলাতে না পেরে অস্থিত্ব হারাতে বসেছে।

এক সময়ে গ্রামে গঞ্জে জিনিসপত্র ফেরি করে বেড়ানো একটা স্বাভাবিক পদ্ধতি ছিল। এখনো ফেরিওয়ালার কালচার গ্রাম থেকে একেবারে মুছে যায়নি, তবে ফেরি করার জিনিসপত্রে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।

সেই ছোটবেলায় দেখেছি- ফেরির মালামাল পোঁটলায় বেঁধে সেই পোঁটলা পিঠে বহন করে গ্রামেগঞ্জে ফেরি করে বেড়াতেন ফেরিওয়ালারা। তাদের ফেরির মূল বিক্রির ছিল মহিলাদের লেইচ,ফিতা, চুঁড়ি,আলতা,শাড়ি ব্লাউজ পেটিকোট ইত্যাদি। এছাড়া মাটির তৈজসপত্র,পর্যায়ক্রমে এলমেনিয়াম,চিনামাটি ও হার আমলে প্লাস্টিকের সামগ্রী। এছারা বাদাম, বুট, কুকিজ, কটকটি, সনপাপরি, হাওয়াই মিঠাই এর পরে আসলো আইসক্রিম যা গ্রামে গ্রামে ফেরিকরে বিক্রি করতো ফেরিওয়ালারা।

গ্রামে যাতায়াত ও মহিলাদের কাছে বাকিতে মাল বিক্রি করতেন। যে কারনে একেক ফেরিওয়ালার বান্দা ক্রেতা তৈরী হয়ে যেত।কারন ফেরিওয়ালারা গ্রামের মহিলাদের কাছে বাকীতে পন্য রিক্রি করতেন। এর পরে তাদের নির্ধারিত দিনে যখন সে আবার মালামার নিয়ে ওই গ্রামে যেতেন তখন তারা সেই বাকি টাকা আদায় নিতেন।

আমি ৮০ ও ৯০ দশকের কথা বলছি তখনো গ্নামের ঘরে ঘরে সেলাই মেশিন আসেনি দুই একটি বনেদী পরিবার বাদে আমাদের মা বোনেরা সুঁই সুতাড হাতের নিপুনতা ফুটিয়ে তুলতেন। তখন জামা কাগড়, ব্লাউজ,পেটিকোট তৈরি করে দিতেন বাজারের দর্জি বা খলিফারা

এখন অবশ্য গ্রামে কিছু কিছু মহিলা সেলাই মেশিন এর সাহার্য্যে সেলাইয়ের কাজ করেন বিধায় গ্রামে এখন আগের মত ব্লাউজ পেটিকোট কিংবা বাচ্চাদের পোশাক আশাক ফেরি করে বেড়ানোর বিষয়টি চোখে পড়ে না।
তাইতো এক সময়কার নামী দামী জনপ্রিয় ফেরিওয়লার কদর হাড়িয়ে বেকার দিন কাটাচ্ছে অথবা পেশা পনিবর্তন করেছে।
তবে ফেরি পেষাটি এখনো সম্পুর্ন রৃপে হারিয়ে যায়নি।

এখন গ্রামেগঞ্জে ফেরি হয় অন্য রকম জিনিসপত্র- এবং আগে যেখানে গাইট বা পোটলার ভেতরে কাপড় চোপড় বেঁধে নিয়ে কাঁধে বহন করে গ্রামে-গঞ্জে ফেরি করে বেড়াতে হতো- এখন সেখানে নতুনত্ব এসেছে ভ্যানগাড়ি,সাইকেলে কেউ কেউ মোটর সাইকেল ও অটোরিক্সায় মালামাল বেঁধে নিয়ে কিংবা ছোট্ট ভ্যানে করে জিনিসপত্র নিয়ে গ্রামে ফেরি করে বেড়ান।
আগে গ্রামেগঞ্জে যেখানে ফেরি হত মহিলাদের শাড়ি চুঁড়ি, ব্লাউজ পেটিকোট আলতা লিপিষ্টক,স্নো যমেয়েদের ফিতা সেপটিপিন কিংবা ছোটদের মিষ্টি কটকটি নামের মিষ্টি।

এখন গ্রামেগঞ্জে ফেরি করে বেড়ানোর বিষয়টি আগের মতো আর কষ্ট সাধ্য নয়। আগে গ্রামেগঞ্জে ভালো রাস্তা ছিল না। মাঠের ভেতর দিয়ে, চিকন আল, কিংবা সরু রাস্তা- যেগুলোকে গ্রামে ‘মালি’ বলে, সে সব দিয়ে হাঁটতে হত। অনেকেই দূরত্ব কমানোর জন্য কাঁচা-রাস্তা দিয়ে না হেটে মাঠের ভেতর দিয়ে হেঁটে এ গ্রামে ও গ্রামে যাতায়াত করতেন।

কিন্তু এখন গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার রাস্তাও পাকা হয়ে যাওয়ায় এখন আর হেঁটে হেঁটে কেউ ফেরি করেন না। এখন ফেরিওয়ালার বাহন হলো সাইকেল কিংবা ছোট রিকশার মত ভ্যান। মূলত গ্রামে গঞ্জের মোড়ে মোড়ে এখানে-সেখানে ছোটখাটো দোকান এবং চায়ের দোকান বা টি স্টল বসে যাওয়ায় দ্রব্য ফেরি করে বেড়ানোর বিষয়টি এখন কমে গেছে। এখন গ্রামের মোড়ে মোড়ে সমস্ত রকম জিনিস পাওয়া যায়- চকলেট, বিস্কুট থেকে শুরু করে সুই সুতো এমনকি গ্রামের কাঁচামালও পাওয়া যায় ছোটখাট এইসব দোকানে।

সময়ের প্রয়োজনে আমাদের সভ্যতার ববকাশমান ধারায় ফেরী বা ফেরিএয়ালা পেষার সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তামানে কদর হারালেও একদম হাড়িরিয়ে যায়নি। যদি আগামীতে হায়িয়ে যায়? সে অতীতের ইতিহাস বলার জন্য আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াশ। করোনা দূর্যোগ না হলে আমি অতীত ও বর্তমান ফেরিওয়ালা ভাইদের নিজস্ব কথা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরতাম।তারা কেমন আছেন? কিভাবে চরছে তাদের দিনকাল? সে ইচ্ছাটি অপুর্ন রয়েই গেল। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে অদুর ভবিষ্যতে আপনাদের করকলমে বিস্তারিত উপস্থাপনে প্রতিশ্নতি ব্যক্ত করছি। সেই সাথে উপস্থাপনার কলেবর বৃদ্ধির জন্য সম্মানিত পাঠককূলের সমালোচনা এবং পরামর্শ প্রত্যাশা করি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।