রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ৩ রমজান ১৪৪৪ হিজরি
রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
Notice: Undefined index: top-menu-onoff-sm in /home/hongkar/public_html/wp-content/themes/newsuncode/lib/part/top-part.php on line 67

বর্ষ পরিক্রমায়! কদম ফোঁটার বর্ষাকাল

কদম ফুল, ছবি: ইন্টারনেট

আষাঢ় শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষা কাল। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রতিকূল আরহাওয়ার প্রভাবে ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শীত গ্রীষ্ম ছারা অন্যান্য ঋতুর অস্থিত্ব খুজে পাওয়াই দায়।
আবহমান বাংলার চিরায়ত বর্ষার রূপ-রস এবং সৌন্দর্য্য ও প্রকৃতির বিচারে বলা যায়, তাপবিদগ্ধ তৃষিত ধরা নববর্ষার বারিধারায় সিক্ত হওয়ার ঋতু বর্ষা। বাঙালীর অতি প্রিয় এই ঋতুর আগমনে প্রকৃতি তার রূপ ও বর্ণ বদলে ফেলে। কেতকীর মনমাতানো সুগন্ধ, কদমফুলের চোখ জুড়ানো শোভা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছ্বল নৃত্যের আবাহন থাকে এই আষাঢ়েই। গাছপালা, তরুলতা, সবকিছুই যেন গ্রীষ্মের দহন থেকে মুক্তি পেয়ে বারিধারায় স্নান করে সজীব হয়ে ওঠে। প্রকৃতি ও উদ্ভিদরাজিও যেন ফিরে পেতে চলেছে শান্তি স্বস্তি ও জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ।বৃষ্টির শব্দে যক্ষের মতোই বাঙালির হৃদয়ে এক অজানা বিরহে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কেতকীর মনমাতানো সুগন্ধ আর কদম ফুলের চোখ জুড়ানো শোভা অনুসঙ্গ হয়ে আছে আষাঢ়ের। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে, ময়ূরের মত নাচেরে, আকুল পরান আকাশে চাহিয়া উল্লাসে কারে যাচে রে..।এখন আষাঢ়ে বৃষ্টি হবে কি হবে না, তা বলা যায় না। কারণ বদলে গেছে বাংলার আবহাওয়া ও জলবায়ুর গতি প্রকৃতি। যেমন এবার গ্রীষ্মে ছিল না তেমন হাঁসফাঁস করা দাবদাহ। জ্যৈষ্ঠের শেষ ১০দিন ছাড়া এবার গ্রীষ্মের উত্তাপ তেমনভাবে কাহিল করতে পারেনি বাঙালীকে। তাই মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ের মধ্যেই চলছে একে বরণ করে নেয়ার নানা আয়োজন। অথচ বাংলার প্রকৃতি থেকে “বর্ষার আগমনের বার্তা বাহক”-“কদম ফুল” যেন হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ভূবণ ভোলানো বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলের হাসি কার না ভালো লাগে। গ্রাম কিংবা শহরের সর্বত্রই বর্ষার আগমনীতে নিজেদের মেলে ধরতো আপন মহিমায় কদম ফুল। কিন্তু কদম গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কদম ফুল না ফুটলে যেন বৃষ্টি ঝরে না, যে কদমকে নিয়ে এত কিছু আষাড়ের বার্তবাহক সেই প্রিয় ফুলের গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। কোথাও এখন আর আগের মতো দেখা মিলেনা। কদম এখন যেন একটি দুর্লভ ফুলের নাম। মনে স্বস্তির ছোয়া নিয়ে ফিরে অতীত আষাঢ় কল্পনাই করা যায় না। বাড়ির আঙ্গিনায় রাস্তায় দু’পাশে কদমগাছ ছিল চোখে পড়ার মতো। আর আষাঢ়ের পুরো সময়টাই কদমগাছ ফুলে ফুলে ভরে থাকত, যা দেখে তৃপ্ত হতেন সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ। এই সময়ে মানুষ প্রিয়জনকে কদম ফুল উপহার দিত। গ্রামের শিশু কিশোর সহ দুরন্ত কিশোরধারা কদমতলায় কদম ফুল নিয়ে খেলা করত কিন্তু আজ ধীরে ধীরে তা একেবারেই হারিয়ে যেতে চলেছে, যেন আকাল পড়েছে কদম ফুলের সৌন্দর্যে। যান্ত্রিক যুগে মানুষ অতীত ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। বাড়ির আশেপাশে ফলমুল ও ফুলের গাছ না লাগিয়ে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় পাহাড়ি গাছ লাগাচ্ছে। আমরা আমাদের জীবনের বেগ বা আর্থিক গতির সঞ্চার করছি ঠিকই কিন্ত আমাদের আবেগ অনুভূতি মমতাকে হারিয়ে ফেলছি। এটা চলতে থাকলে কদম ফুরের মত আমরা একদিন আমাদের সভ্যতা হারিয়ে ফেলবো। তা হয়তো হতে পারে নিকট অতীতেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

দৈনিক হুংকারে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।